ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রধান শিক্ষককে নির্যাতনের অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ১১ নভেম্বর ২০২৩  
প্রধান শিক্ষককে নির্যাতনের অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী

স্কুলের সভাপতি হতে প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এমনকি তিনি স্কুলে গিয়ে বর্তমান সভাপতিকে অপমানিত করে বেরও করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বলছে, নির্যাতনের ঘটনা জানলেও তারা এখনো কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম নুরুল আমিন। তিনি জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান। সম্প্রতি তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পরে তিনি ফোন করে ওই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের নির্দেশ দেন। সেসময় চেয়ারম্যান জানান, সভাপতি হয়ে তিনি এই নিয়োগ সম্পন্ন করবেন। কথা না রাখায় গত ৩১ অক্টোবর অপহরণ করা হয় তাকে। এরপর চেয়ারম্যান ২ নভেম্বরের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বন্ধের জন্য নির্যাতন চালান। একই সঙ্গে তাকে দিয়ে আবেদনপত্র লিখিয়ে নিয়ে সেই নির্বাচন বন্ধ করান।

আরো পড়ুন:

পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ আহ্বান করলে ক্ষিপ্ত হন মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী। গত ৭ নভেম্বর ফোন করে নিজ বাড়িতে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষককে। পরের দিন সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। একই সঙ্গে অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নুরুল আমিন বলেন, ‌উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার মাথা ও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেছেন। আমাকে যখন ছেড়ে দেওয়া হয় অণ্ডকোষের যন্ত্রণা থেকে লাঘব পেতে প্রকাশ্যে রাস্তায় লোকজনের সামনে প্রসাব করে দেই। তারপরও আমার ব্যথা কমেনি। পাশের একটা ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খাই। এরপর ফোন করে আমার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে এসে তার সহায়তায় হাসপাতালে যাই। 

তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধা দেন। বলেন ভর্তি হলে তোকে খুন করবো। মানুষ মারলে কিছুই হয় না। এরপর আমি ভয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি যাতে কাউকে কিছু না বলি সেজন্য আমাকে প্রতিদিনই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) কিভাবে জেনেছেন জানি না এর দায়ও কিন্তু আমার ঘাড়ে আসবে। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

স্কুলের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন বলেন, অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করা হলেও আমি ৯ নভেম্বর স্কুলে যাই। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে স্কুলে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে লাঞ্ছিত করে এবং স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে। সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ছিলেন। তিনি সবাইকে শুনিয়ে বলেন, এখন থেকে এই বিদ্যালয়ের সভাপতি আমি, আমার নির্দেশে সব কার্যক্রম চলবে। 

তিনি আরও বলেন, আমি বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। এই স্কুলটি একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।

এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়েও বক্তব্য দেননি উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের চা খেয়ে চলে যেতে বলেন। 

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান মুঠোফোন জানান, নির্যাতনের ঘটনা জানলেও তারা এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রিটন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়