ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

‘ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে’ কাঠগড়ায় আসামিকে থাপ্পড়

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২২, ১৫ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:৩৫, ১৫ নভেম্বর ২০২৩
‘ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে’ কাঠগড়ায় আসামিকে থাপ্পড়

লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুসরাত জামানের নির্দেশে এজলাসের ভেতর কাঠগড়ায় আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক আসামিকে থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে আইনজীবীরা নুসরাত জামানের আদালত বর্জন করেছেন। এ সময় তাকে (বিচারক) লক্ষ্মীপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জামান মামলার শুনানির পর মামুন নামে এক আসামিকে এজলাসে ডেকে নেন। পরে পুলিশের এক কনস্টেবলকে ওই আসামিকে দুটি থাপ্পড় দিতে বলেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কনস্টেবল আসামিকে থাপ্পড় দেন। মামুনও পুলিশের একজন সদস্য। এই ঘটনায় একটি প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, এজলাসের ভেতর থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) আইনগত প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগী আবদুল্লা আল মামুন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও অভিযোগটি দিয়েছেন।

অভিযোগে আবদুল্লাহ আল মামুন উল্লেখ করেন, স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা বাদী হয়ে মামুনের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লক্ষ্মীপুর সদর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আদালতে বিচারাধীন। মঙ্গলবার সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। বাদীপক্ষ দুজন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষীর জেরা শেষে মামুন এজলাস থেকে বের হয়ে বারান্দায় যান। এ সময় বাদী ও তার মা পারুল বেগম তাকে মারধর করেন। বিষয়টি তিনি আদালতের বিচারক নুসরাত জামানকে জানান। কিন্তু বিচারক একতরফাভাবে কথা না শুনে তাকে এজলাসের কাঠগড়ায় ডেকে নেয়। পরে বিচারক পুলিশ কনস্টেবল কবিরকে নির্দেশ দেয়, তাকে দুটি চড় মারতে। বিচারকের নির্দেশে বিচারপ্রার্থী জনগণের সামনেই কনস্টেবল কবির তাকে দুটি চড় দেন। এ সময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়।

মামুন জানায়, বিচারক তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে চড় দিয়েছি, এখন আমি নিজে তোকে চড় মারবো’। পরে আদালত পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করলে মামুনকে কোর্ট কাস্টডিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় আইনজীবী আবদুর রহিম রাজু বলেন, আদালতের এজলাসে ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জামান কনস্টেবলকে দিয়ে আসামিকে থাপ্পড় মারিয়েছেন। এটি আইনবহির্ভূত ঘটনা। এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করেছেন। বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সঙ্গে সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বসবেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নুসরাত জামানের আদালতে কোনও আইনজীবী যাবেন না। তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। 

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সভা করেছি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।

লক্ষ্মীপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমরান হোসেন ফয়সাল বলেন, লিখিত অভিযোগের ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি বাইরে আছি। এ বিষয়ে এখন বিস্তারিত বলতে পারব না।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারী কৌশলী অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন বলেন, এজলাসে এ ধরনের কাজ বিচারক করতে পারেন না। এটি খুবই ন্যক্কারজনক।

জাহাঙ্গীর/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ