নবান্ন উপলক্ষে জয়পুরহাটে মাছের মেলা
শামীম কাদির, জয়পুরহাট || রাইজিংবিডি.কম
![নবান্ন উপলক্ষে জয়পুরহাটে মাছের মেলা নবান্ন উপলক্ষে জয়পুরহাটে মাছের মেলা](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023November/Joypurhat-2311181103.jpg)
সারি সারি দোকানে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বিগ্রেড ও বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। এক কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের মাছ এসেছে মেলায়। লোকজনও উৎসাহ নিয়ে দেখছেন, কেউ আবার কিনছেন। শনিবার (১৮ নভেম্বর) নবান্ন উৎসব ঘিরে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে দিনব্যাপী এই মাছের মেলার আয়োজন করা হয়।
পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা অগ্রহায়ণে বসে এই মাছের মেলা। এই দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসী। তবে এবার তিন দিন পর মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল। মেলায় নদী, দিঘি ও পুকুরে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশি প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে ভিড় জমান ক্রেতারা ও পাইকাররা।
অগ্রহায়ণে মাঠ থেকে ঘরে নতুন ফসল উঠলেই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন উপজেলার কৃষকেরা। নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলায় অংশ নেয় উপজেলার মাত্রাই, হাতিয়র, মাদারপুর, হাটশর, হারুঞ্জ, পুনট, বেগুনগ্রাম, পাঁচগ্রামসহ ২৫ থেকে ৩০ গ্রামের মানুষ। এই উৎসবে যোগ দিতে প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ আসেন মেলায় মাছ কিনতে।
মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথার ওপর তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাই পৌরসভার আকন্দ পাড়া মহল্লার মাছ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম। তিনি ২০ কেজি ওজনের সিলভার মাছটির দাম হাঁকেন ১৬ হাজার টাকা। ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিগ্রেড ও সিলভার কার্প মাছ বেশি বিক্রি হয়েছে এবারের মেলায়। এছাড়া, রুই ও কাতলা বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে।
মেলায় মাছ কিনতে আসা সাবরিনা ইয়াসমিন এশা, আনিছুর রহমান, মুনিষ চৌধুরি, মোস্তাক রহমান জানান, এবারের মেলায় প্রচুর মাছ উঠেছে, কিন্তু দাম অনেক বেশি।
মাছ ব্যবসায়ী লেবু সরদার, আব্দুল কুদ্দুস মহন্ত মালী জানান, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচাকেনা সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু বেচাকেনা হয়েছে, সব খরচ বাদে লাভ টিকবে।
মেলার জন্য এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন নাহিদ চৌধুরি। পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান তিনি।
মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা জানান, বাঙালি জীবন থেকে উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ রকম উৎসবে অংশ নিতে পারলে ব্যস্ততম জীবনে কিছুটা প্রশান্তি আসে।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য ময়েন উদ্দিন জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে এসেছেন মেলায়। মাছের সরবরাহ বেশ ভালো।
কালাই পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মেলায় দেশি মাছ নিয়ে আসেন খামারি ও জেলেরা। আমরা অতিথিপরায়ণ জাতি। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আত্মীয়দের মধ্যে পারস্পরিক মিলনমেলার সুযোগ ঘটে, এটা ভালো দিক।’
মাসুদ
আরো পড়ুন