ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আগাম আলুতে মলিন চাষির মুখ

নীলফামারী প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২১:০৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
আগাম আলুতে মলিন চাষির মুখ

প্রতি বছর এ সময় নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম আলু ঘরে তোলে চাষিরা। ভালো দাম পেয়ে ঈদআনন্দ থাকে আলু চাষিদের পরিবারে। 

এবারও উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি নির্ভর জেলা নীলফামারীতে আগাম আলু উঠতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। একদিকে নতুন আলুর ফলন ভালো না হওয়া, অন্যদিকে অন্যান্য বছরের চেয়ে দাম কম পাওয়ায় হাসির বদলে মলিন চাষির মুখ। 

আরো পড়ুন:

চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর বৈরি আবহাওয়ার কারণে আগাম আলুর ফলন ভালো হয়নি। দামও ভালো নেই। স্থানীয় বাজারে আলু বিক্রি করাটাও বড় কঠিন। এই সুযোগটা হাতিয়ে নিচ্ছেন আড়ৎদাররা। তাই জমিতেই কৃষককে নতুন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। তাদের অভিযোগ, ভারত থেকে নতুন আলু আমদানি করা হচ্ছে। সে কারণে এ বছর আগাম আলুর দাম পাচ্ছেন না। এছাড়াও দেশে হরতাল-অবরোধে আগাম আলুর দামে ধস নেমেছে বলে ধারণা করছেন তারা। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে ধারণা করছেন চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এখন আগাম আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আলু উৎপাদন করে নিজেদের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছেন জেলার অনেক কৃষক। দেশে আগাম জাতের আলু এই জেলায় প্রথম উৎপাদন শুরু করেন কৃষকরা।    

সরেজমিন দেখা গেছে, আলুর মাঠে কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউ আলু কুড়াচ্ছেন, কেউ ঠেসে ঠেসে বস্তা ভরছেন। কোথাও আবার ডিজিটাল মিটারে চলছে ওজন পরিমাপের কাজ। ক্ষেতের পাশে ভর্তি হচ্ছে ভ্যান, ট্রলি ও ট্রাক। আলু তোলার এমন দৃশ্য জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ বসুনিয়াপাড়া এলাকার কৃষক মনোরঞ্জন রায় বলেন, ‘এবার তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। রোপনের ৫২ দিনের আগাম আলু উত্তোলন করতে শুরু করিছি। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। এছাড়াও দামও কম পাওয়া যাচ্ছে। কিছু দিন পর আরও দাম কমতে শুরু করবে। এতে করে আমরা যারা আগাম আলু চাষ করেছি, তাদের লোকসানে পড়তে হবে।’

কৃষক ললিত চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগাম আলু চাষ করে ভালোই লাভবান হই। এ বছরে উর্ধ্বমুখী দামের আশায় সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে আগে-ভাগে আগাম আলুর বীজ রোপণ করেছি। ২০ থেকে ৩০ বস্তা আলুর আশা করা হচ্ছে। তবে দাম খুবই কম, কোনোরকমে খরচ তোলা যাবে।’

কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষক মনিরুল ইসলাম, আবুল কামাল বলেন, এবার আগাম আলু বীজ লাগানোর পর বৃষ্টি হয়ে অনেক আলু গাছ নষ্ট হয়েছে। ফলনও অনেক কম হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এবার দাম কম করছে, তারা অজুহাত দেখাচ্ছে হরতাল অবরোধের। এভাবে দাম কম পেলে কোনোরকমে খরচ তোলা মুশকিল হয়ে যাবে।’ 

মানিক হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। যেভাবে খরচ হয়েছে, তাতে আলুতে পোষায় না। সরকার যদি সার ও কীটনাশক দাম কমে দেয়। তাহলে চাষাবাদ করে পোষাতো। আলু লাগানোর সময় বীজের দাম ৬০ টাকা কেজি ছিল, এখন নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।’

কিশোরগঞ্জ এলাকার আলু চাষি জয়নাল হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর বেশি দামে আগাম আলু বিক্রি করি। এ বছর পাইকাররা বলছে, হরতাল-অবরোধে আলু ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে নিলেও পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে। তাই কম আলু জেলার বাইরে যাচ্ছে। এ জন্য দামও কম।’

আলু ব্যবসায়ী ওসমান গনি বলেন, ‘এবার আগাম আলু চাষ করে কৃষকদের লাভ হবে না। কারণ আলু লাগানোর পর বৃষ্টি হওয়ায় অনেকের আলু পঁচে গেছে। এদিকে হরতাল অবরোধের কারণে আলু পরিবহন করার জন্য গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ভারতের নতুন আলু আসার কারণে আলুর দাম কমেছে। বর্তমানে নতুন আলুর দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কিনতে হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে কিনেছিলাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।’ 

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় চলতি বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। আগাম আলু তোলা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছে। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে, সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
 

সিথুন/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়