ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

শূন্য হাতে ভোটের মাঠে বিএনএমের দুই প্রার্থী

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৬, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩  
শূন্য হাতে ভোটের মাঠে বিএনএমের দুই প্রার্থী

হাতে নগদ টাকা নেই। ব্যাংক হিসাবও শূন্য। তারপরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) দুই প্রার্থী। তারা রাজশাহী-১ ও রাজশাহী-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আবার রাজশাহীর ছয়জন প্রার্থীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। চারজন পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে ৩৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাতজন প্রার্থীর হাতে নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। ৫০ হাজার করে টাকা আছে চারজনের। একজন ভোটে দাঁড়িয়েছেন ৮০ হাজার টাকা নিয়ে। সর্বোচ্চ নগদ ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৩ টাকা আছে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের হাতে।

বিএনএম মনোনীত রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের প্রার্থী মো. শামসুজ্জোহার হাতে কিংবা ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। পেশায় শিক্ষক এই প্রার্থীর বাসায় একটি মোটরসাইকেল, ৩ লাখ টাকার আবসাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে। স্ত্রীর ৯ ভরি ও তার ১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আছে। কৃষি কিংবা অকৃষি কোনো জমি নেই। এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে নগদ আছে ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। ব্যাংকে আছে আরও প্রায় ৯ কোটি টাকা।

বিএনএমের রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টুর হাতে কিংবা ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। বিএনপি থেকে এসে শূন্য হাতে বিএনএমের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তবে, ব্যবসায় তার ৭৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে বলে হলফনামায় দেখিয়েছেন।

জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, ‘হাতে কিংবা ব্যাংকে টাকা নেই, কিন্তু ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে। সেই টাকায় খরচ করব। ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত তো খরচ করা যাবে।’

এদিকে, রাজশাহীর ৩২ প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনের আছে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। নগদ ১০ হাজার আর ব্যাংকের ৫০ হাজার নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন রাজশাহী-৩ আসনে এনপিপির প্রার্থী সইবুর রহমান। ৫০ হাজার করে টাকা আছে চারজনের। এর মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী রাজশাহী-১ আসনের এনপিপির নুরুন্নেসার হাতে ৫০ হাজার টাকা আছে। ব্যাংকে কিছু নেই। রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের হাতেও আছে নগদ ৫০ হাজার। ব্যাংকে আছে মাত্র ৩ হাজার ২০৬ টাকা। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের জাসদের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীর হাতে ৫০ হাজার টাকা আছে। ব্যাংক হিসাব শূন্য। নগদ ৫০ হাজার আর ব্যাংকের ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ভোট করছেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এনপিপি প্রার্থী মহসিন আলী।

নগদ মাত্র ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ভোটে নেমেছেন রাজশাহী-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। তারও ব্যাংকে কিছু নেই। নগদ ১ লাখ টাকা করে আছে ৭ প্রার্থীর। তারা হলেন—রাজশাহী-১ আসনে বিএনএফের প্রার্থী আল-সাআদ (ব্যাংকে ১৭ লাখ ৯০ হাজার), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান দুদু (ব্যাংকে ২ হাজার ৪৩৮ টাকা), রাজশাহী-২ আসনের বিএনএমের কামরুল হাসান (ব্যাংক শূন্য), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান (ব্যাংকে ২ কোটি ২০ লাখ), জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম (ব্যাংক শূন্য) এবং রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাহেনুল হক (ব্যাংকে আছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা)।

হাতে নগদ ২ লাখ টাকা করে আছে চারজনের। তারা হলেন—রাজশাহী-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শামসুদ্দীন (ব্যাংকে ১ লাখ), রাজশাহী-৩ আসনে বিএনএফের প্রার্থী বজলুর রহমান (ব্যাংক শূন্য), রাজশাহী-৬ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী রিপন আলী (ব্যাংকে নেই) এবং জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন রিন্টু (ব্যাংকে ১ লাখ)। নগদ ৩ লাখ টাকা করে আছে রাজশাহী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন (ব্যাংকে নেই) ও রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বিএনএমের সাইফুল ইসলাম রায়হান (ব্যাংকে নেই)। ৫ লাখ টাকা করে আছে রাজশাহী-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সোলাইমান হোসেন (ব্যাংকে ৫০ হাজার) এবং রাজশাহী-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল হোসেনের (ব্যাংকে ২ লাখ)। বাকি ১৬ জন প্রার্থীর ৬ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২১ কোটি টাকা পর্যন্ত নগদ হাতে আছে।

রাজশাহীর ৬ আসনের ৩৮ প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। হলফনামায় তারা নিজেদের স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন—রাজশাহী-১ আসনের জামাল খান দুদু ও মো. শামসুদ্দীন; রাজশাহী-২ আসনের আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী ও সাইফুল ইসলাম স্বপন; রাজশাহী-৩ আসনের বজলুর রহমান ও সোলাইমান হোসেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন চারজন। তারা হলেন—রাজশাহী-৩ আসনের সইবুর রহমান, রাজশাহী-৪ আসনের সাইফুল ইসলাম রায়হান, রাজশাহী-৫ আসনের শফিকুল ইসলাম ও রাজশাহী-৬ আসনের রিপন আলী। বাকিরা মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। দুজন করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও চিকিৎসক আছেন।

রাজশাহীর দুজন প্রার্থীর নামে বর্তমানে দুটি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক বিএনপি নেতা মতিউর রহমান মন্টু ও রাজশাহী-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল তালেব প্রামানিকের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা চলছে। তিনজন প্রার্থীর আগে মামলা থাকলেও একজন অব্যাহতি পেয়েছেন, একজন খালাস পেয়েছেন, একজনের মামলা রাষ্ট্র প্রত্যাহার করেছে। অন্য ৩৩ জন প্রার্থীর নামে কোনো মামলা হয়নি। প্রার্থীদের মধ্যে শুধু দুজনের বৈধ অস্ত্র আছে। এর মধ্যে রাজশাহী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ একটি পিস্তল ও একটি শটগান এবং রাজশাহী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ একটি শটগানের মালিক।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘প্রার্থীদের সত্যিকারের সম্পদের কতটুকু হলফনামায় আছে, কতটুকু নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারপরও যতটুকু এসেছে, তা দেখে প্রার্থীদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা থেকেও প্রার্থী সম্পর্কে ধারণা হয়। তাই, ভোটারদের এই হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

কেয়া/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়