বাহুবলে রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতা
মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আব্দুস ছালাম। বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি। হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আকারে বড় এবং দামেও বেশি এ সব ফুলকপি থেকে লাভবানও হয়েছেন আব্দুস ছালাম।
কৃষক আব্দুস ছালাম হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে। তিনি বারোমাসি সবজি চাষ করে আসছেন। এ মৌসুমে তাকে রঙিন ফুলকপি চাষে পরামর্শ দেন উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামিমুল হক শামীম। তিনি কৃষক আব্দুস ছালাম, তৌহিদ মিয়া, মো. দুলাল মিয়া, আব্দুল্লাহ মিয়া, আরফান আলীসহ কয়েকজন কৃষককে ভারত থেকে উন্নতজাতের রঙিন ফুলকপির বীজ সংগ্রহ করে দেন।
কৃষক আব্দুস ছালাম বাড়ির পাশে প্রায় ১৫ শতক জমিতে বীজ রোপণ করেন। রোপণের প্রায় আড়াই মাসের মধ্যে ক্ষেত থেকে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি সংগ্রহ করে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচে লক্ষাধিক টাকার রঙিন ফুলকপি বিক্রি হয়েছে।
কৃষক আব্দুস ছালাম বলেন, ‘আমি যখন জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করি, তখন অনেকেই বলেছিলেন ভালো ফলন হবে না। এখানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল হক শামীম আমাকে পরামর্শ দেন। আমি জমিতে সঠিকভাবে পরিচর্যা করেছি। ভালো ফলনে বেশ সাড়া পেয়েছি এবং আর্থিকভাবেও সফল হয়েছি। ১৫ শতক জমিতে দুই রকমের ফুলকপি চাষে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো।’
তিনি বলেন, ‘আমার জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আগামী বছর অনেকে বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
একই এলাকার বাসিন্দা কৃষক তৌহিদ মিয়া বলেন, কৃষক আব্দুস ছালামের পাশাপাশি তাকেও পরামর্শ দিয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল হক শামীম। তিনি প্রায় এক বিঘাতে রঙিন ফুলকপির চাষ করে দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ করেছেন। আগামী মৌসুমে আরও বেশি পরিমাণে রঙিন ফুলকপির চাষ করার চিন্তা করছেন তিনি। কারণ রঙিন ফুলকপি বাজারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়।
উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল হক শামীম বলেন, আব্দুস ছালাম, তৌহিদ মিয়া, দুলাল মিয়া, আব্দুল্লাহ মিয়া, আরফান আলীসহ কয়েকজন কৃষকের মাধ্যমে এ বাহারি ফুলকপির আবাদ করানো হয়। সফলতা আসায় আগামীতে এ অঞ্চলে সবজিটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করানো হবে। বাহুবলে কৃষিতে এটি একটি নতুন সংযোজন।
তিনি জানান, বাহারি রঙের ফুলকপি চীনে খাওয়া হয় সালাদ হিসেবে। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারেও চাহিদা বেশি। দেখতে সুন্দর এ কপি অর্ধসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মোটিভেশনের মাধ্যমে বাহুবলে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার। পোকা দমনে ফেরোমন ও হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই রঙিন ফুলকপি বিক্রি করা যায়। একেকটি কপির ওজন হয় প্রায় এক থেকে দেড় কেজি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, বাহুবল উপজেলায় প্রথমবার আব্দুস ছালাম, তৌহিদ মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে। রঙিন ফুলকপিতে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্টসহ মানবদেহে উপকারী বিভিন্ন উপাদান আছে। সাধারণ ফুলকপি যেখানে প্রতিকেজি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে এটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। আশা করা যাচ্ছে, বাহুবলে আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ অনেকটাই বাড়বে।
মামুন/বকুল