কর্মসংস্থানের সুযোগ চান হিজড়া সম্প্রদায়
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
রাজশাহীর হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ চান। তারা সমাজের চোখে প্রচলিত নেতিবাচক কোনো কাজ আর করতে চান না। সমাজের মূল স্রোতধারায় এসে স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে চান। এই দাবি জানিয়ে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তারা।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতা ও ‘সুস্থ জীবন’ এর সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি জয়িতা মোহনা মুহিন জানান, তাদের অনেক সদস্যই নিজ থেকেই এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। তারা আর নেতিবাচক কাজে থাকতে চান না। এজন্য দরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের সুযোগ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের কাজের মানুষের দরকার হয়, সেখানে তাদের সদস্যদের চাকরি দেওয়া যেতে পারে।
তিনি সভায় আক্ষেপ জানিয়ে জানান, তারা রাজশাহী শহরে থাকার মতো বাসস্থান পাচ্ছেন না। ভালো একটি বাসাও পাচ্ছেন না। হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য হাওয়ায় কেউ তাদের বাড়ি ভাড়া দিতে চান না। এতে ভালো বাসস্থান না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে যে ঘরগুলো দেওয়ার কথা ছিল, সেগুলো শহরের অনেক দূরে দিতে চায়। তিনি সেগুলো যার বাড়ি যেখানে, সেখানেই দিতে অনুরোধ করেছেন। এর চেয়ে আরও ভালো হয় যদি তাদের থাকার জন্য সরকার থেকে একটি কোয়ার্টার করে দেয়। তিনি এ সময় হিজড়া সদস্যদের করা বিভিন্ন ভালো কাজগুলো সবার সামন তুলে ধরার আহ্বান জানান।
দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সুলতানা আহমেদ সাগরিকা জানান, তিনি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পেছনে স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। তাদের প্রকাশিত ইতিবাচক সংবাদ ভালো কাজে লেগেছে। তারা মানুষের কাছে তাকে পৌঁছাতে কাজ করেছেন। তিনি সামনে আরও ভালো কাজ তুলে ধরার আহ্বান জানান।
দিনের আলো হিজড়া সংঘের উপদেষ্টা শরীফ সুমন বলেন, রাজশাহীতে হিজড়া সম্প্রদায় সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে সব সময়ই সহযোগিতা পাচ্ছেন। তাদের ইতিবাচক কাজগুলো সমাজের সামনে প্রতিনিয়ত তুলে ধরছেন। তবে তাদের সমস্যাগুলো আরও বেশি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। কারণ সবার আগে তারা মানুষ। ‘লিঙ্গ পরিচয়’ একজন মানুষ হিসেবে তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার কোনোভাবেই কেড়ে নিতে পারে না। তারা আজ টাকা দিয়েই বাসা ভাড়া পাচ্ছেন না, এটা কোনো কথা হতে পারে? তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। তারা গণমাধ্যমের সহযোগিতায় এক সময় মূল স্রোতধারায় ফিরবে বলেও উল্লেখ করেন।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী এডিটরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক রাজশাহী সংবাদের সম্পাদক আহসান হাবীব অপু, দিনের আলো হিজড়া সংঘের কোষাধ্যক্ষ মিস জুলি, হিজড়া সংঘের প্রোগ্রাম অফিসার রায়হানুল হক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রকল্পের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী মৌসুমী খাতুন। সভায় সাংবাদিক ও হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কেয়া/মাসুদ