ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড

ভালো চাকরি পেয়ে সংসারের দায়িত্ব নেওয়া হলো না রকির

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২০, ১ মার্চ ২০২৪  
ভালো চাকরি পেয়ে সংসারের দায়িত্ব নেওয়া হলো না রকির

বেইলি রোডে বহুতল ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন যশোরের কামরুল হাবিব রকি (২১)।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় সাততলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকানের ক্যাশিয়ার ছিল কামরুল হাবিব রকি। তিনি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে।

খাটিয়ার পাশে বসে আহাজারি করতে করতে কামরুল হাবিব রকির মৃত্যুর শেষ সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার মা রিপা বেগম বলেন, ‌আমার সোনা প্রথমে আমার ভাইরে ফোন করে বলে যে ‌‘মামা আমারে বাঁচাও’। এরপরে আমি আমার ফোন দিয়ে আমার সোনারে ফোন দিই, তখন আমার সোনা বলে, ‘আম্মা আমি মনে হয় আর বাঁচব না’। তখন আমি আমার সোনারে কলমা পড়তি বলি, আমিও কলমা পড়ছি, আমার সোনাও আমার সঙ্গে কলমা, দোয়া-দরুদ পড়ছে। কলমা পড়তি পড়তিই কল কেটে যায়, তারপর থেকে আর আমার সোনারে ফোন দিয়ে পাইনি, পরে খবর পাই আমার পরান পাখি আর নেই।

তিনি আরও বলেন, ১৫ দিন আগে বাড়িতে এসেছিল রকি। ডিগ্রিতে ভর্তির ফরম তুলে আবার ফিরে যায় ঢাকায়। বলে যায় ডিগ্রি পাশ করতে পারলেই ভালো চাকরি করে বাবাকে ইজিবাইক চালাতে দেবে না। সংসারের দায়িত্ব সে নেবে।

শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে যশোর সদরের ধোপাখোলা গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে রকিকে শেষবারের মতো দেখতে বাড়িতে ভিড় করে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনরা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।

নিহতের প্রতিবেশী এবং স্বজনরা জানান, অগ্নিকাণ্ডে নিহত কামরুল হাবিব রকির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার বাবা কবির হোসেন পেশায় ইজিবাইক চালক। পার্শ্ববর্তী গাজির দরগাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরিবারের সচ্ছ্বলতা ফেরাতে মাত্র দুই মাস আগে ঢাকায় ‘কাচ্চি ভাই’হোটেলে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের ধোঁয়ায় রকি অক্সিজেন ফেল করে মারা যান বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

নিহতের বাবা কবির হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগে রকি বাড়িতে এসেছিল। ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফরম তুলে আবার ঢাকায় ফিরে যায়। আমার ছেলেকে আমি এভাবে হারাব, আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি। আমার ছেলে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আজ লাশ হয়ে ফিরে আসলো।

নিহতের প্রতিবেশী মো. পলাশ হোসেন বলেন, কামরুল হাবিব রকি ছেলে হিসেবে অনেক ভালো এবং ভদ্র। গ্রামের সকলেই তাকে অনেক স্নেহ করত। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় অল্প বয়সে উপার্জনের জন্য কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি শুরু করেন।

শুক্রবার দুপুরে জুম্মা’র নামাজের পর রকির জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

রিটন/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়