ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী যুবক সীমানা পেরিয়ে মেঘালয় হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, অবশেষে ফিরল বাড়ি

রাজশাহী প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২০ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৫:৫০, ২০ মার্চ ২০২৪
প্রতিবন্ধী যুবক সীমানা পেরিয়ে মেঘালয় হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, অবশেষে ফিরল বাড়ি

বাবার সঙ্গে মনজুরুল

বাড়ি ময়মনসিংহ। মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক বাড়ি থেকে বেরিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায় ভারতে। ময়মনসিংহের ওপারে মেঘালয় হয়ে সে চলে আসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। রাজশাহীর বিপরীতে মুর্শিদাবাদের এক বাড়িতে আশ্রয় হয় তার। এই ছেলেটিকে ফিরিয়ে এনে বাবার হাতে তুলে দিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। 

যুবকের নাম মো. মনজুরুল। বাবার নাম হালিম উদ্দিন। বাড়ি ময়মনসিংহের ধোপাউড়া উপজেলার হাজমপাড়া গ্রামে। মনজুরুল আগে ভালোই ছিল। ১২ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। গত বছরের ২৭ রমজান সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। হারানো ছেলেকে খুঁজে পেতে হালিম উদ্দিন অন্তত ১২ জন কবিরাজের কাছে যান। কবিরাজদের কেউ বলেন, মনজুরুল ঢাকায় গেছে। কেউ বলেন অন্যখানে। তবে তার সন্ধান পাওয়া গেল ভারতের মুর্শিদাবাদের মুক্তারপুর গ্রামে।

বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অনুরোধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ৩৭ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে মনজুরুলকে হস্তান্তর করে। এরপর মনজুরুলকে বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আনা হয়। রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বাবার কাছে তুলে দেওয়া হয়। বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে হালিমের সঙ্গে আসেন চাচাতো ভাই ডালিম আলী।

ডালিম আলী জানান, দুই মাস আগে ফেসবুকের এক ভিডিওতে তারা দেখেন, মনজুরুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সে তার নাম-ঠিকানা বলতে পারে না। এই ভিডিও দেখে ছেলেকে ফিরে পেতে বাবা হালিম আলী ছুটে যান বিজিবির স্থানীয় ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু ভারতের ওই এলাকাটি বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের বিপরীতে। তাই বিষয়টি ১ ব্যাটালয়িনকে অবহিত করা হয়। এরপর ১ ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে বিএসএফকে বিষয়টি জানিয়ে ছেলেটিকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

মনজুরুলের বাবা হালিম উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের লাইগা তো দুশ্চিন্তা ছিল। তার মা তো অসুস্থ হইয়া পড়ছে। আমার শরীরের অবস্থাডা তো দেকছেনই। ভাত দিলে আমি খাই না। ঠেলা মাইরা ফালাইয়া দিই। পাগল হইলেও তো মনে আমার ছেলে। বাড়িত থাকলে আমার শান্তি লাগে। পাগলডারে আমি ফালাই কই? স্যারেরে (বিজিবিকে) ধন্যবাদ। অসম্ভব কাজ কইরা আমার ছেলেরে আইনা দিছে।’

বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম মণ্ডল বললেন, ‘অন্য একটি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে আমি জানতে পারি, প্রতিবন্ধী এই ছেলেটি আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বিপরীতে ভারতে আছে। খবর পেয়ে আমি বিএসএফকে অনুরোধ করি, যেন ছেলেটিকে খুঁজে বের করা হয়। আমার অনুরোধ গ্রহণ করে তারা দুই দিন পর আমাকে জানায়, তারা একটি প্রতিবন্ধী ছেলেকে খুঁজে পেয়েছে এবং সে বাংলাদেশী বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর আমি এখান থেকে প্রমাণপত্র পাঠাই। সেটি দেখে তারা ছেলেটিকে ফেরত দিয়েছে। ছেলেটিকে ফেরত আনা আমাদের কাজ ছিল। এটা আমাদেরই দায়িত্ব। তারপরও অসহায় প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে তার বাবার হাতে তুলে দিতে পেরে বিশেষ ভাললাগা কাজ করছে।’
 

কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়