খুলনায় তীব্র দাবদাহে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
![খুলনায় তীব্র দাবদাহে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত খুলনায় তীব্র দাবদাহে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024April/8585-2404201045.jpg)
‘বায়ুমণ্ডলের বিদ্যমান ৪২/৪৩ ডিগ্রি টেম্পারেচারের সাথে মাথার উপরে টিন আর লোহার অ্যাঙ্গেল, এই তিনে মিলে আমার ঘরটাকে হিট চেম্বারে পরিণত করেছে। আর ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখাটা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে লু হাওয়া টেনে নিয়ে আমার মুখের উপর ছুড়ে মারছে! আল্লাহ ক্ষমা করুন...’— এভাবে খুলনার গরমের তীব্রতায় ওষ্ঠাগত প্রাণ নিয়ে নিজ বসবাসের ঘরের বাস্তব অবস্থা তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন পরিবেশকর্মী মো. মাহবুব আলম বাদশা।
তবে বাদশা একা নন, এ অবস্থা খুলনার অধিকাংশ বাসিন্দার। বিশেষ করে টিনের ঘর এবং ভবনের ওপর তলায় বসবাসকারীদের নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। ঘরে যেন ফ্যানের বাতাসে ঝরছে আগুনের ফুলকি, আর সড়কে পিস ও ইটের তাপ মুখমণ্ডল পোড়াচ্ছে।
খুলনায় গত কয়েক দিন বইছে তীব্র দাবদাহ। এতে করে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিশেষ করে শ্রমজীবী, রিকশা ও ভ্যান চালকেরা বেশি সমস্যায় পড়ছে। এ ছাড়া অতি গরমে পানি শূন্যতা, ডায়েরিয়া, সর্দি গলাব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও।
তীব্র রোদে তেঁতে উঠেছে খুলনা অঞ্চলের জনজীবন। প্রতিদিন যেন বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। অসহনীয় গরমের কারণে বাসা থেকে বের হচ্ছে না অনেকে। শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর হতে না হতেই ফাঁকা হয়ে যায় মহানগরের প্রধান সড়কগুলো।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এমন আবহাওয়া। তবে আকাশ মেঘলা বা বৃষ্টিপাত হলে কিছুটা তাপমাত্রা কমবে। মূলতঃ মৌসুমী আবহাওয়ার কারণে এমন তাপমাত্রা বাড়ছে।
দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খুলনার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। কোথাও স্বস্তির বাতাস নেই। সর্বত্র গরম আর গরম। কখনও প্রচণ্ড, আবার কখনও ভ্যাপসা গরম। গরমের তীব্রতায় ছোট-বড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে খরতাপে ঘর্মাক্ত হয়ে অসহনীয় অবস্থায় পড়ছে তারা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ভর দুপুরে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে বিক্রি বেড়েছে বৈদ্যুতিক পাখা ও এসির। বেড়ে গেছে ডাবের দামও। ১০০ টাকার নিচে মিলছে না ডাব। বিক্রিও বেড়ে গেছে বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয়ের।
রিকশা চালক মজনু মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন যে গরম পড়েছে, এতে করে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঈদের পর হাতে টাকা নেই। বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। সড়ক বলতে গেলে ফাঁকা। কোনো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এই গরম উপেক্ষা করে সারা দিন সড়কে অপেক্ষায় থাকায় শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যে কারণে বিকালে বের হচ্ছি।’
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, অনেকে গরম থেকে বাঁচতে গাছতলা বা উন্মুক্ত পার্কে বসে আছে। পাশাপাশি নগরীতে হাক-ডাক ছেড়ে লেবুর সরবত বিক্রি হওয়ায় গরমে তৃষ্ণার্ত মানুষেরা ভিড় জমাচ্ছে। এই গরম ও তপ্ত রোদের হাত থেকে বাঁচতে ঠাণ্ডা পানির সরবত পান করছেন।
তীব্র গরমে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কিছুক্ষণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম ঝরছে। কেউ কেউ সড়কের মাঝখানে বিলবোর্ডের সামান্য ছায়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার যানজট দেখলে দৌড়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অধিকাংশ রোগী ডায়রিয়া, পানি শূণ্যতায় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে।
অসহনীয় এ গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে টিনের তৈরি বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তিরা। রোদে অনেকে বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন বড় গাছের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। নদী-নালা, পুকুর ও খাল-বিলে গা ভেজাতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। গ্রামের মানুষজন এসব জায়গার পানিতে নেমে শরীর ভিজিয়ে গরম থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছে।
পশ্চিম রূপসার শিপইয়ার্ড রোডের বাসিন্দা জাবের আলী বলেন, অসহ্য তাপদাহে জীবন অতিষ্ঠ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনায় তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় খুলনার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরের কোথায় কোথায় তাপমাত্র ৪০-৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়।
খুলনার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বলেন, এই তপ্ত রোদে এক টানা বেশি সময় কাজ করা যাবে না। এছাড়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। কোনো অবস্থায় ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না। ঘর্মাক্ত অবস্থায় গোসলও করা যাবে না। কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে স্যালাইনের পানি পান করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন না করতে পারলে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
/বকুল/
আরো পড়ুন