গোপালগঞ্জে তাপমাত্রা ৪০.৮, গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কুকুর পানিতে নেমে গরম থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছে
গোপালগঞ্জে তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন থেকে প্রাণীকূল। গত কয়েক দিন ধরে জেলায় চলছে এমন তাপপ্রবাহ। ইতোমধ্যে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে, এমন তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন চলবে। আর বাইরে বের হলে ছাতা আর পানি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চৈত্র শেষে এখন চলছে বৈশাখ। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তীব্র রোদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে জেলাজুড়ে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এমন তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে রিকশা-ভ্যানচালকসহ খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা। কিছুক্ষণ কাজ করার পর ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে তাদের। অনেক প্রাণীকে নদী, খাল বা জলাশয়ে নেমে তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। অনেকেই পিপাসা মেটাতে ছুটছে ডাব বা রাস্তার পাশে বসা শরবতের দোকানে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে জেলায় ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা উঠা-নামা করলেও আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকায় আরও কয়েক দিন ধরে জেলায় দাবদাহ চলবে।
রিকশা চালক রফিক শেখ বলেন, ‘সকাল ৬টায় রক্ষা নিয়ে বের হয়েছি। বেলা যত গড়িয়েছে ততই তাপমাত্রা বেড়েছে। তাপ বাড়ার কারণে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে যাত্রী না থাকায় আয় রোজগার কমে গেছে। যদিও একটা ভাড়া মারলে তারপর আধাঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হচ্ছে।’
অপর রিকশা চালক আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘তীব্র গরম পড়ছে। একটা ভাড়া টানলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। তাই ঘন ঘন ভাড়া মারতে পারছি না। ভাড়া না মারতে পারলে খাব কী? বৃষ্টি না হলে এ তাপ আর কমবে না।’
জেলা শহরের পাচুরিয়া এলাকার সৈয়দ আকবর হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে তীব্র গরম বড়েছে। ছেলে-মেয়েদের বাইরে বের হতে দিচ্ছি না।’
গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপপ্রবাহ পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত জেলায় বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টিপাত না হলে এই তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা নেই।
গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা থাকলে আমরা আশঙ্কা করি, কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।’
তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যাবে না। যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, তারা যেন বেশি করে তরল খাবার পান করেন। তীব্র গরমে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারসহ ঘন ঘন পানি পান করার পরামর্শও দেন তিনি।
বাদল/বকুল