ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

রাস্তা খুঁড়ে বিল নিয়ে উধাও ঠিকাদার, ভোগান্তিতে ৫ হাজার মানুষ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০২৪  
রাস্তা খুঁড়ে বিল নিয়ে উধাও ঠিকাদার, ভোগান্তিতে ৫ হাজার মানুষ

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে চার বছর আগে আধা কিলোমিটারের রাস্তা পাকা করার কাজে খুঁড়েছিল একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তা খুঁড়ার পর বালু ও সামান্য খোয়া বিছিয়ে বিল তুলে নিয়ে পালিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। তখন থেকেই অসমাপ্ত রাস্তাটির কারণে চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।

এদিকে, রাস্তাটি সম্পর্কে জানতে কয়েকদিন ঘুরালেও স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এক সপ্তাহ সময় নিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে তারা জানিয়েছে, কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি খুঁড়েছিল, কখন টেন্ডার হয়েছিল, কতো টাকা বরাদ্দ ছিল কিছুই জানেন না তারা।

অসমাপ্ত এই রাস্তাটি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের বেংরোল জিয়াবাড়ী গ্রামের হায়দার আলীর মোড় থেকে তাহেরের মোড় পর্যন্ত। যার দৈর্ঘ্য আধা কিলোমিটার। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পাকা করণের জন্য রাস্তা খুঁড়ে ওই গ্রামের ৫ হাজার মানুষকে বিপদে ফেলেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। বর্ষাকালে এই সড়কে পানি জমে বন্ধ হয়ে যায় চলাচল। ফলে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষদের পড়তে হয় চলাচলের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তিতে। 

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে ওই আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের জন্য মিষ্টি খেতে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন ওই সময় দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী ও তার লোকজন। এসব টাকা গ্রামবাসীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তি। রাস্তা পাকা না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে এখন তার বাড়িতে নিয়মিত ঘুরছেন গ্রামের লোকজন।

আব্দুল কাদের বলেন, গ্রামবাসীর কাছ থেকে ১০০, ৫০০ ও হাজার টাকা করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা এবং পরে আরও ১৫ হাজার টাকা ইঞ্জিনিয়ারের অফিসে দিয়েছি। কাজ না হওয়ায় গ্রামের লোকজন এখন আমার কাছে টাকা ফেরত চাচ্ছেন। কয়েকদিন আগে টাকা ফেরত না দেওয়ায় বাড়িতে ঢিল ছুড়েছে গ্রামের লোকজন। লজ্জায় হাট-বাজারে যেতে পারছি না। খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে আমার।

বেংরোল জিয়াবাড়ী গ্রামের মনসুর আলম বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতিবেশী বেলালের বাড়িতে আগুন লেগেছিল। রাস্তা খুঁড়ে রাখার কারণে ফায়ার সার্ভিস সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি। বর্ষার সময় কাদাপানিতে এই এলাকায় কেউ আসতে চায় না।

সাজু নামের অপর একজন বলেন, শুনেছিলাম প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল এই রাস্তা নির্মাণে। তাড়াহুড়ো করে রাস্তা খুড়লো ঠিকাদার। মনে করেছিলাম দীর্ঘদিন পরেও হলেও রাস্তা পাকা হচ্ছে, দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে গ্রামবাসী। এখন উল্টো দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এলজিইডি অফিসে খবর নিয়ে শুনেছি, ঠিকাদার বিল তুলে নিয়ে পালিয়েছেন।

কলেজছাত্র আল আমিন বলেন, বর্ষার সময় গাড়ি আসতে চায় না এই সড়কে। কলেজে ইজিবাইকে যেতে চাইলে ৪০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা চায়। এ ভোগান্তি থেকে সবাই মুক্তি চায়।

রাস্তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও বরাদ্দ যাবতীয় তথ্যের জন্য একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম তথ্য বের করার জন্য সময় চান। সময় নিয়ে ৭ দিন পর গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি উল্টো সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, ৪ বছর আগের রাস্তার কাজ, এখন খবর নিতে আসছেন কেন? এমন হতে পারে ঠিকাদার ভুল করে ওই রাস্তার কাজ শুরু করেছিল। আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি, এর বেশি জানি না। 

৬৫ হাজার টাকা মিষ্টি খাওয়ার জন্য কে নিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অনীহা প্রকাশ করেন সাইফুল ইসলাম। 

জানতে চাইলে এলজিইডির ঠাকুরগাঁও নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, রাস্তা খুড়ে রাখবে ঠিকাদার, ৪ বছর ভোগান্তিতে থাকবে মানুষ, এটা হতে পারে না। আমি বিয়ষটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।

মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ