ঢাকা     রোববার   ১৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ২ ১৪৩১

পাঁচ লাখ খরচে ৫০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন সাঈমের

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২৪ মে ২০২৪   আপডেট: ১৪:১৫, ২৫ মে ২০২৪
পাঁচ লাখ খরচে ৫০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন সাঈমের

ছবি: রাইজিংবিডি

পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে লাউয়ের বীজ উৎপাদন করে অর্ধকোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের কৃষক আবু সাঈম। প্রতিবারের মতো এবারও আট একর জমি লিজ নিয়ে লাউ বীজের চাষ করেছেন। দীর্ঘ আট মাস পরিচর্যার পর ফলন দেখে খুশি তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে সরেজমিনে গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক তিস্তার চড়ে গিয়ে দেখা যায়, লাউ থেকে বীজ বের করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আবু সাঈমসহ কয়েকজন। বালুচরের উপরে লাউয়ের গাছ থেকে লাউগুলো এনে স্তূপ করছেন তারা। তবে সারি সারি স্তূপ করে রাখা এসব লাউয়ের দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই এমন সোনার ফসল তিস্তার বালুচরের।

সাঈমের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরির পাশাপাশি তিস্তার তপ্ত বালুচরে গেল পাঁচ বছর ধরে লাউয়ের বীজ উৎপাদন করছেন। এবারও সাঈম চরে লাউ বীজ চাষাবাদ করেছেন। অসময়ে বর্ষার আতঙ্ক আর খরার শুকনো বালুতে আট মাস ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম করে ফসল দেখে হাসি ফুটেছে তার। প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে লাউয়ের বীজ থেকে ৪০-৫০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন বুনছেন সাঈম। তবে বাজার খারাপ হলে এ আয় কিছুটা কম হতে পারে বলেও জানান তিনি।

সাঈম জানান, রংপুর নগরীর সিটি বাজার থেকে লাল তীর কোম্পানির ভিত্তি বীজ এনে রোপণ করেছিলেন তিস্তার বালুচরে। অনেক কষ্ট করে, কখনও সেচ বা কখনও নদী থেকে পানি তুলে এনে সতেজ রেখেছিলেন লাউয়ের গাছগুলো। মাচাং পদ্ধতিতে চাষাবাদ না করে বালির উপরেই করা হয়। তবে কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং এবার ফলন এবার আরও ভালো হয়েছে। একর প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ বীজ উৎপাদনের আশা তার। খুচরা বাজারে এসব বীজ ১৪-১৫ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। আর কোম্পানির নির্ধারিত দামে মণ প্রতি ২২-২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা জানান সাঈম‌। তবে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করে নির্ধারিত দাম পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সাঈমের মতো মানিক, আজমল, কালামসহ প্রায় শতাধিক কৃষকের ভাগ্য বদলায় লাউ, মিষ্টি কুমড়া সবজি বীজ উৎপাদনে। কয়েক বছর আগেও পরিবার নিয়ে যারা অভাবে দিন কাটাতো এখন তারাই সবজি বীজ আবাদ করে স্বচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন। লাভের মুখ দেখায় এখন অন‌্য ফসলের আবাদ ছেড়ে বীজ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন তারা। লাউ বিক্রির চেয়ে বীজে ৬ থেকে ৭ গুন লাভ বেশি বলে জানান কৃষকরা।

বর্ষায় ভাঙন আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধুধু প্রান্তর উত্তরের তিস্তার এমন চিত্র যুগের পর যুগ। দুই প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে বিভিন্ন ফসলের ভীড়ে গত ৫ বছর ধরে তিস্তার বালুচরে লাউয়ের বীজ উৎপাদন করে ভাগ্য বদলেছে সাঈমসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের। তাদের সকলের চোখে-মুখে  স্বচ্ছতার প্রতিচ্ছবি।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জেলায় এবার ৫শ হেক্টরের অধিক জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। সবজি হিসেবে লাউ বিক্রির পরিবর্তে বীজ করে বিক্রিতে কয়েক গুণ লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা এখন এই বীজ প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষীদের নানাভাবে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। 

তবে চাষীদের ন্যায্য মূল্য পেতে বীজ কোম্পানিগুলোর সাথে কৃষকদের আন্তঃসম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সবজি উৎপাদন কয়েক গুণ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সবজিতে উচ্চ ফলনশীলতা। তাই বিক্ষিপ্তভাবে বীজ উৎপাদনকারীরা প্রশিক্ষণসহ ফলনের ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা পেলে সচ্ছলতা ফিরবে হাজারো কৃষকের বলে দাবি স্থানীয়দের।

/আমিরুল/ইমন/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়