ঢাকা     সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৫ বছর 

খাবার পানির তীব্র সংকট, সংস্কার হয়নি বেঁড়িবাধ

শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৫ মে ২০২৪   আপডেট: ২১:৪৭, ২৫ মে ২০২৪
খাবার পানির তীব্র সংকট, সংস্কার হয়নি বেঁড়িবাধ

বিশুদ্ধ পানির সন্ধানে নারীদের কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে

২৫ মে ২০০৯, এদিন প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঘ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। ঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের কান্না যেন আজও শোনা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ওই দিনের কথা মনে করলে এখনো আঁতকে ওঠেন। এখনো সাতক্ষীরা উপকূলের বাসিন্দারা ঝড় পরবর্তী সে সময়ের দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা মনে করে কেঁদে ওঠেন।

আইলা আজও উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার হাজারো মানুষকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিচ্ছে। এখনো সংস্কার হয়নি ঝড়ের সময় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধসমূহ। ওই ঝড়ে শুধুমাত্র সাতক্ষীরায় মারা যান ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। আহত হয়েছিলেন দুই শতাধিক মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকার বাসিন্দা শরবানু, মারুফা, আকলিমা বলেন, আইলা আঘাত আনার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকার মানুষের হাহাকার এতোটুকু থামেনি। দুমুঠো ভাতের জন্য জীবনের সঙ্গে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ

তারা আরও বলেন, আইলার পর থেকে এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির সন্ধানে নারীদের কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে। অনেকে আবার দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন।

আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব রহমান, আব্দুস সাত্তার মোড়ল ও আমিনুর ইসলাম জানান, খাবারের পানিসহ নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এলাকার মানুষদের। আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট এবং উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো এখনও ঠিকমতো সংস্কার করা হয়নি।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসিম বরন চক্রবর্তী বলেন, ২০০৯ সালে আইলার কারণে এই উপজেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২০ সালে ২১ মে ঘর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে আবারও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এই জনপদ। বর্তমানে রেমাল নামের আরও একটি ঘূর্ণিঝড় উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই ঝড়ের আগমনী বার্তায় উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ ১৫ বছর আগেও সবুজ বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল সাতক্ষীরা শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকূলীয় অঞ্চল।

তিনি আরও বলেন, শাক-সবজি ও ধান-পাটসহ অন্যান্য ফসলে ভরে থাকতো পুরো এলাকা। সেদিন আর নেই। লবণাক্ততায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে মাটি। এখন চারদিকে গাছপালাহীন ঘের আর ঘের। সবুজের বালাই নেই। নেই পরিবেশগত ভারসাম্য।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বলেন, আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে জাইকার অর্থায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে তারা ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরিস্থিতি মোকাবেলা জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বিভাগের অধীনে ১০টি পয়েন্টে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের পরিমাণ প্রায় ৮ কিলোমিটার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, সরকারি উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ চিহ্নিত করে বালি ও জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কার করার চেষ্টা চলছে। 

সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি কাজে অংশগ্রহণের জন্য। এ ছাড়া ত্রাণকার্য পরিচালনার জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা রয়েছে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়