ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

ঝড়ের রাতে রোগীকে হাসপাতালে নিতে চাননি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২৭ মে ২০২৪   আপডেট: ১৭:৩৮, ২৭ মে ২০২৪
ঝড়ের রাতে রোগীকে হাসপাতালে নিতে চাননি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক

দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনা

রোববার রাত পৌনে ১২টা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব চলছে। ঠিক এমন সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম (৬৫)। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে তার ছেলে জামাল হোসেন মাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ফোন দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনাকে। কিন্তু, তিনি (অ্যম্বুলেন্স চালক) বলেন, ‌‘আমি এখন ঘুমাচ্ছি, নিতে পারবো না। রোগী হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হলে অন্য ব্যবস্থা করেন।’ 

ঘূর্ণিঝড় রেমালে জরুরি স্বাস্থ্য সেবায বিশেষ ১০টি নির্দেশনা ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। যদিও তার ব্যতিক্রম ছিল খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতেও নির্দেশনা দেয় অধিদপ্তর। কিন্তু, বাস্তবে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতিরিক্ত কোনো জনবল নিয়োগতো ছিলই না। শুধুমাত্র মেডিক্যাল অফিসার শাওন বিশ্বাস, উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার দুলাভ বিশ্বাস ও প্রতিদিনের মতো ডিউটি নার্স দিয়ে কার্যক্রম চলে।

অভিযোগকারী জামাল হোসেন সোমবার (২৭ মে) বলেন, গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে আমার মা মনোয়ারা বেগমের বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। তাকে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনাকে ফোন করি। তিনি (অ্যাম্বুলেন্স চালক) বলেন, ‘আমি এখন ঘুমাচ্ছি, নিতে পারবো না। রোগী হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হলে অন্য ব্যবস্থা করুন।’ পরে আমি আমার মাকে অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

জামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে অ্যাম্বুলেন্স চালকের শাস্তি দাবি করেছেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, মো. মফিজুল মিনার অবহেলার কারণে দিঘলিয়া উপজেলাবাসী অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলা থেকে খুলনা শহর ও বিভিন্ন জেলায় গেলে তিনি তিনি নির্ধারিত সরকারি ফি বেশি পান। কিন্তু, উপজেলার কোনো রোগী তাকে ফোন দিলে হয় ফোন রিসিভ করেন না অথবা তাকে অন্য কোনো ব্যবস্থা করতে বলেন। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আনলে তিনি সরকার নির্ধারিত ফি কম পান। এজন্য তার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী বহনে আগ্রহ কম।

অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘রাতে আমি বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। একারণে রোগীকে অন্য মাধ্যমে হাসপাতালে নিতে বলেছি।’ 

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহাবুব আলম বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনার রাতে হাসপাতালে অবস্থান করার কথা ছিল। কিন্তু, তিনি নির্দেশনা মানেনি। এ বিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, রোববার লিখিতভাবে সব দপ্তরকে স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মফিজুল মিনা রাতে হাসপাতালে না থেকে বাসায় ঘুমিয়ে থাকা খুবই দুঃখজনক বিষয়। রাতে রোগী হাসপাতালে কেন আনেননি সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সব পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু, অ্যাম্বুলেন্স চালক মফিজুল মিনার সে নির্দেশনা মানেননি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নূরুজ্জামান/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ