ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড়ে এবারও ঢাল হয়ে দাঁড়ালো সুন্দরবন

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ২৮ মে ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৪, ২৮ মে ২০২৪
ঘূর্ণিঝড়ে এবারও ঢাল হয়ে দাঁড়ালো সুন্দরবন

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল ইতোমধ্যে উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বরাবরের মতো এবারও ঢাল হয়ে স্থলভাগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়েছে সুন্দরবন।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে স্থলভাগে কিছুটা গতি কমিয়ে আঘাত হেনেছে বলে ধারণা বন বিভাগ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।

সুন্দরবনের প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সুন্দরবন অ্যাকাডেমি মোংলার নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, 'সুন্দরবন আমাদেরকে ঠিক মায়ের মতন বুকে আগলে রাখছে। ঝড়ের সময়ে সে নিজে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি।’

আরো পড়ুন:

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য সুন্দরবনের নির্বাহী পরিচালক ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে রক্ষা করতে সব সময় ঢাল হয়ে দাঁড়ায় সুন্দরবন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল যে গতিতে এসেছিল তা কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। যার ফলে স্থলভাগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কম হয়েছে।’

এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বলছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বনের অভ্যন্তরে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সুপেয় পানির পুকুর, বন বিভাগের জলযান ও ওয়্যারলেস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু বন্যপ্রাণির মৃত্যু হয়েছে।

পূর্ব বনবিভাগের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘এবারও সুন্দরবন ঢাল হয়ে লোকালয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সুন্দরবন নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচন্ড বাতাসে বনের গাছ ও ডালপালা ভেঙে গেছে এবং বেশ কিছু বন্যপ্রাণিও মারা গেছে। গতকাল বনের ভেতর প্রায় ছয় থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আমরা যতটুকু জেনেছি সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে বাগেরহাট শহর থেকে বনের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি আমাদের স্টেশন রয়েছে। সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর, শেলার চর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনের টিনের চালা উড়ে গেছে। কটকা কেন্দ্রের কাঠের জেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বন কর্মী, জেলে, বাওয়ালি ও বন্যপ্রাণিদের জন্য সুপেয় পানির যে আধার ছিল সেগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে গেছে। সুন্দরবনের কটকায় সুপেয় পানির যে পুকুরটি ছিল সেটি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছোট ছোট যে ট্রলারগুলো ছিল সেগুলো জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কাঠ ভেসে গেছে। প্রবল বাতাসের ফলে বনের গাছপালা ভেঙেছে। যেহেতু প্রায় দুই দিন ধরে ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস হয়েছে তাই অনেক বন্যপ্রাণি বিপদাপন্ন হয়েছে। বেশ কিছু বন্যপ্রাণির মৃত্যুর খবরও আমরা পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, যেহেতু গতকাল রাত পর্যন্ত ঝড় ছিল আমরা সরেজমিনে কোথাও যেতে পারিনি। আমরা আজ থেকে সরেজমিনে এসব এলাকায় যাব এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করবো।

শহিদুল/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়