ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অ্যাকটিভ ফাইনের নিরীক্ষককে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০১, ১ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ২১:০২, ১ ডিসেম্বর ২০২২
অ্যাকটিভ ফাইনের নিরীক্ষককে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি হাওলাদার ইউনুস এবং কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে কোম্পানিটির বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে কোম্পানিটি কোনও সহযোগিতা না করায় কমিশনে অভিযোগ জানায় নিরীক্ষক। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোম্পানিটিকে তলব করে সতর্ক করে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় পুনরায় বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য ইউনুস এবং কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে নিরীক্ষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ চিঠি জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে হবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিশেষ নিরীক্ষার অবস্থা সম্পর্কে নিরীক্ষক হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগের বিষয়ে এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১ নভেম্বর ২০২১, ২৫ মে ২০২২ এবং ১৬ অক্টোবর ২০২২ এ মোট চারটি চিঠি দিয়েছে কমিশন। সেই চিঠিতে কমিশন হাওলাদার ইউনুস এবং কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে কোম্পানিটির বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য অনুমতি দিতে সম্মতি জানিয়েছে। এই চিঠি জারির দিন থেকে আগামী অতিরিক্ত পনের কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির বিশেষ নিরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে হবে এবং কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে।

এর আগে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দিয়েছিল কমিশন। তবে, বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি বলে বিএসইসিতে অভিযোগ করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষককে অসহযোগিতার জন্য চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির ৭৯০তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী; বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ৮ লাখ টাকায় অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রমে নয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের তিন বছরের আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষও। এজন্য ওই কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি গত বছরের ৩০ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়।

এদিকে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লা মো. মিরাজ-উস-সুন্নাহ, একই প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রতন মিয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপক স্নেহাশিস চক্রবর্তী।

বিএসইসি’র জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তদন্ত কমিটিতে বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এ আদেশ জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মোট পরিশোধিত মূলধনের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস। কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে মাত্র ১২.০৪ শতাংশ শেয়ার আছে পরিচালকদের হাতে। ফলে, এখনও ১৭.৯৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে কোম্পানিকে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কোম্পানিকে একাধিকবার শুনানিতে তলব করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদসহ কোম্পানির সচিব ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএফও) তলব করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১২.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪.৩২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.৩৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬৩.২৯ শতাংশ শেয়ার আছে। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৯.৩০ টাকায়।

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়