ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

সরকারকে বিব্রত করতে পুঁজিবাজারে সক্রিয় কারসাজি চক্র, সতর্ক বিএসইসি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:৫১, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪
সরকারকে বিব্রত করতে পুঁজিবাজারে সক্রিয় কারসাজি চক্র, সতর্ক বিএসইসি

পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলতে কারসাজি চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, চক্রটি পুঁজিবাজারের সূচকে প্রভাব ফেলতে পারে (ইনডেক্স মুভার স্ক্রিপ্ট), এমন কোম্পানির শেয়ার চিহ্নিত করে তা কম দামে বিক্রির চেষ্টা করছে।

মূলত কম দামে ইনডেক্স মুভার শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে সরকারকে বিব্রত করতে কারসাজি চক্র এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারে কারসাজিসহ যেকোনো অপচেষ্টা ঠেকাতে নজরদারি ও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড থেকে সূচকে প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করেছে কারসাজি চক্র। তা বিএসইসির মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের নজরে আসে। বিষয়টি বিএসইসি খতিয়ে দেখছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে লেনদেন শুরুর পর ব্রোকারেজ হাউজ সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ৫ নম্বর ওয়ার্ক স্টেশন থেকে ইস্টার্ন ব্যাংকসহ আরো কিছু কোম্পানির শেয়ার বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে মো. ইশরাক হোসেনের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউজ। এদিন লেনদেনের শুরুতে পুঁজিবাজারের সূচক যেন পতনমুখী অবস্থানে নেমে আসে, সে উদ্দেশ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার কম দামে বিক্রি করা হয়। সোমবার ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২৯.৮০ টাকা। কিন্তু, মঙ্গবার সকালে লেনদেন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্রোকারেজ হাউজটি থেকে ২৮.১০ টাকায় ব্যাংকটির কিছু শেয়ার বিক্রি করা হয়। এতে তাৎক্ষণিক ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমে যায় এবং ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট কমে যায়। কেন বাজারমূল্যের চেয়ে কমে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, সেটা বিএসইসির মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট নজরে আনে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের পর পুঁজিবাজার গতিশীল হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। পাশাপাশি, পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বজায় রাখতে চলতি মাসেই ১৮ ও ২২ জানুয়ারি দুই দফায় ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন সীমা) তুলে নেয় বিএসইসি। সংস্থাটি মনে করেছিল, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাজারে গতি ফিরে আসবে। কিন্তু, এ সুযোগে কারসাজি চক্র পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে সক্রিয় হয়ে উঠে। তাদের সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি বিএসইসির মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টে বেশকিছু দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছিল। মঙ্গলবার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিএসইসির নজরে আসে। পরবর্তীতে তাৎক্ষণিক প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি।

বিনিয়োগকারীদের মতে, কারসাজি চক্র পরিকল্পিতভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পুঁজিবাজারের বড় ধরনের পতন ঘটাচ্ছে। তাই, অনতিবিলম্বে এই কারসাজি চক্রকে তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, কারসাজি চক্র যতই সক্রিয় হোক না কেন বিএসইসি সব সময় সতর্ক অবস্থানে আছে। পুঁজিবাজারে কারসাজিসহ যেকোনো অপচেষ্টা ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেছেন, কারসাজি ও অনিয়ম করে পরিকল্পিতভাবে পুঁজিবাজার পতনের জন্য দায়ী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য বিএসইসির কাছে দাবি জানাচ্ছি।

তবে, সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আজম খান রাইজিংবিডিকে বলেছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা ভিত্তিহীন।

এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়