ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ইমনের নাম ‘সালমান শাহ’ আমি রেখেছিলাম

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইমনের নাম ‘সালমান শাহ’ আমি রেখেছিলাম

১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ধূমকেতুর মতো সালমান শাহ’র আবির্ভাব। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেই সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। যে রহস্যের জট আজো খোলেনি। সালমান শাহ’র পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্দেহের আঙুল ওঠে স্ত্রী সামিরার দিকে। ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সালমান শাহ’র সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন সামিরা। প্রেমের বিয়ে পায় সফল পরিণতি। কিন্তু খুব দ্রুতই পরিণয় রূপ নেয় গভীর শোকে। এতগুলো বছর পর এই প্রথম সামিরা বলেছেন সালমান শাহ’র সঙ্গে তার প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্যজীবন এবং স্বামীর মৃত্যুপরবর্তী দুঃসহ সেইসব দিনগুলোর কথা। রাহাত সাইফুলের অনুলিখনে সামিরার বয়ানে পড়ুন এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় কিস্তি

১৯৯২ সালে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য ইমনকে পছন্দ করেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। ইমনের পুরো নাম চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এরপর আমি ইমনের নাম ‘সালমান শাহ’ দিয়েছি। সালমান খানের অভিনয়ের ভক্ত আমি। তাই ইমনের নামের শুরুতে সালমান আর শাহরিয়ার থেকে ‘শাহ’ নিয়ে সালমান শাহ রেখেছি। ইমনকে আমি সব সময় ইমন বা জানু বলেই ডাকতাম। সালমান শাহ নামে ডাকতাম না।

১৯৯২ সালের ৩ আগস্ট ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মহরত হয়। এ সিনেমার জন্য ইমনকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল। এরপর ‘তুমি আমার’ সিনেমার জন্য ১ লাখ টাকা, ‘দেনমোহর’ সিনেমায় দেড় লাখ, ‘মায়ের অধিকার’ সিনেমার জন্যও দেড় লাখ টাকা করে নিয়েছে। এগুলো যখন সুপার-ডুপার হিট করে তখন ধীরে ধীরে তার পারিশ্রমিকও বেড়ে যায়। সর্বশেষ ছটকু আহমেদের ‘বুকের ভিতর আগুন’ সিনেমার জন্য সে দশ লাখ টাকা নিয়েছে।

ইমনের সিনেমার জন্য কস্টিউম ডিজাইন আমি করে দিতাম। এখনও সিনেমায় নামগুলো খেয়াল করলে দেখা যাবে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে সেখানে ‘সামিরা শাহ’ লেখা আছে।


একটা সময় দেখা গেল ইমনের চুল পড়ে যাচ্ছিল। তখন ইমনকে বললাম চুল বড় রাখতে এবং মাথায় কাপড় ব্যবহার করতে। এরপর সিনেমায় মাথায় কাপড় বেঁধে ও অভিনয় করেছে। সেই কাপড়গুলো ছিল আমার ওড়না। আমার দেয়া ডিজাইন ইমন সব সময় পছন্দ করত। ইমন শুটিং সেটে কথায় কথায় কেঁদে দিত। ডলি জহুর আন্টি আদর করে ভাত খাইয়ে দিলে দেখা যেত ও কাঁদছে। এ কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা ডলি জহুর আন্টি বা শাবানা ম্যাডাম ভালো বলতে পারবেন। তাদের সামনেই সব ঘটেছে। তারা দেখেছেন। তারা ইমনকে ছেলের মতো আদর করত। এ কারণেই তাদের কাছ থেকে আদর পেলে সে কেঁদে ফেলত।

ইমন মাকে পছন্দ করত না। এটা ইমনের পরিবার, খালা-মামা ও তাদের বাচ্চারা জানত। ফিল্মের লোকেরাও জানত। ওর মাকে নিয়ে সবসময়ই ও মানসিক চাপে থাকত। অনেক কষ্ট নিয়ে সে আলাদা হয়েছিল মায়ের কাছ থেকে। ওর মা কারাগারে ছিল কিছুদিন। ইমন দেখতে যেতে না। আমিই জোর করে পাঠিয়েছি। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি তার পাশে থাকতে।

আমাদের দাম্পত্যজীবন ভালোই চলছিল। সত্যি বলতে আমাকে নিয়ে ইমনের পাগলামি ছিল অন্য লেভেলের। অনেক গল্প মনে পড়ে। সব কিছ ভুলে থাকতে চাইলেও ভুলে থাকা যায় না। ওর মতো অসাধারণ সুন্দর মনের পুরুষ আমি আজও দেখিনি। সবাইকে বশ করতে পারত কথা দিয়ে, হাসিমুখে। আমি যদি কখনও রাগ করেছি ও কতোভাবেই না আমার মান ভাঙিয়েছে। একবার আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে আমার মন খারাপ হয়েছিল। আমার মন ভাঙাতে ইমন প্লেন ভাড়া করেছিল। সে সব স্মৃতি আজও পীড়া দেয়।


** সালমান শাহ’র প্রেম ও বিয়ে

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫  সেপ্টেম্বর ২০১৭/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়