ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যারা বয়কট করেছিলেন তারাই অবৈধ: মিশা সওদাগর

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৯:৩১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

আলো-আঁধারের ছায়া সঙ্গে নিয়েই পা রাখি চলচ্চিত্রের ‘আতুর ঘর’ খ্যাত এফডিসিতে। তখন মাত্র সন্ধ‌্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল এফডিসি ছিল কোলাহলপূর্ণ। বোঝাই যাচ্ছিল দীর্ঘদিন পর এফডিসিতে শুটিং হচ্ছে। তাও আবার বর্তমান সময়ের শীর্ষস্থানীয় দুই তারকা শাকিব খান-মিশা সওদাগর শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন।

পা বাড়াই এফডিসির ১ নং ফ্লোরের দিকে। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, ড্রয়িং রুমে বসে আছেন দাপুটে খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। আর তার সামনে সাজানো মদের বোতল আর গ্লাস। রয়েছে তার সাঙ্গ-পাঙ্গরাও। এসব আয়োজন সিনেমার দৃশ্যের প্রয়োজনে। এরই মধ্যে তরুণ পরিচালক তপু খান জানান, সেট রেডি। শাকিব খানও হাজির। এরপর শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। শট শেষ করে ফিরে আসেন মিশা সওদাগর। কিছুক্ষণের বিরতি। আর এই ফাঁকে কুশলবিনিময় করে তিনি নিয়ে যান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে। শুরু হয় আড্ডা।

কয়েকদিন আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের উপর আরোপিত বয়কট তুলে নিয়েছে। আর এই বিষয় নিয়েই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল তার অবসান হয়েছে, এটা খুবই ভালো। তবে আমি কিন্তু নিয়মিত কাজ করে গেছি। কেউ তো আমার কাজে বাধা প্রয়োগ করেননি। গত বছর দেশে ফিরেই নতুন পাঁচটি সিনেমায় কাজ করি। যারা বয়কট করেছিলেন তারাই ছিলেন অবৈধ কমিটি। অবৈধ কমিটির কোনো কিছুই বৈধ হবে না। এখন তারা নিজেরাই সংগঠনে নেই, অস্তিত্ব বিলীন। নিষেধাজ্ঞা কারা দেবে? তারা কারা? ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু দুষ্ট লোক থাকবেই। তাদের এড়িয়ে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য ভাবতে হবে। ১৮ কিংবা ৩৮টি সংগঠন থাকলেই হবে না, বেশি বেশি নতুন প্রযোজক দরকার। ভালো মানের বেশি সিনেমা হলেই চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে।’

চলচ্চিত্রে আরো নতুন শিল্পী প্রয়োজন। প্রযুক্তির কারণে দর্শক এখন এগিয়ে গেছে। ঢাকাই চলচ্চিত্রের সব সেক্টরে আরো দক্ষ নতুন লোক প্রয়োজন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দর্শক চাহিদা মাথায় রেখে গবেষণা করে কাজ করা উচিত। সবকিছু নিয়ে নতুন করে ভাবাও প্রয়োজন বলে জানান মিশা সওদাগর।

আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে শাকিব খান-নিপুণ প্যানেল দিচ্ছেন। এই প্যানেল থেকে নির্বাচনে লড়বেন মিশা সওদাগর—এমন কথাই উড়ছে চলচ্চিত্রপাড়ায়। এ বিষয়ে সরাসরি উত্তর দেননি মিশা সওদাগর। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো বর্তমান কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। তাই এ নিয়ে এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছি না। আমি সিনিয়দের থেকে শিখেছি—বর্তমান কমিটিতে থাকাকালীন আগামী দিনের অভিপ্রায় কী তা বলা যাবে না। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরই বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারব।’

কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন মিশা সওদাগর। কিন্তু ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নেয়ার জন‌্য অনেকটা তড়িগড়ি করে দেশে ফিরেছেন তিনি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকের ভাষ‌্য—শুধু শুটিংয়ের জন‌্য ফেরেননি বরং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত দেশে ফিরেছেন মিশা। কিন্তু এসব কথা হেসে উড়িয়ে দেন এই দাপুটে অভিনেতা। তার ভাষায়—‘বিষয়টা তেমন না। পরিচালক তপু খান আগে থেকেই আমার সঙ্গে সিনেমাটির জন্য যোগাযোগ করেন। কিন্তু এর আগে সবকিছু ব্যাটেবলে না মেলায় কাজটি করার জন‌্য অনাগ্রহ দেখাই। এবার আমার ভাবনাটা তারা আমার মতো করে ভেবে কাজটি করতে চেয়েছেন। যার কারণে আমি সম্মতি দিই। সবকিছু মিলে যাওয়ায় কাজটি করছি। তাছাড়া আমেরিকা যাওয়ার আগে কাজটি শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা হয়নি। আমেরিকায় যাওয়ার পর দ্রুত দেশে ফেরার জন্য অনুরোধ করেন পরিচালক। সিনেমার স্বার্থে দেশে ফিরে এসেছি। এসে বিশ্রাম না নিয়েই সিনেমাটির জন্য তৈরি হয়ে যাই। দর্শক ভালো একটি সিনেমা পেতে যাচ্ছে। আমি সব সময় চেয়েছি ভালো সিনেমার সঙ্গে থাকতে। যদিও এখন ভালো সিনেমার সংখ্যা কমে গেছে। তাছাড়া শাকিব-মিশা জুটি বিগত দিনে বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছে। দর্শকের কাছেও আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সবকিছু ভেবে কাজটি করছি। সিনেমার সঙ্গে নির্বাচনের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে কোনো কথাও হয়নি।’

এদিকে শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির  মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, কিছু শিল্পীর ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি স্মরণ করলেই মিশা সওদাগর বলেন—‘১০ জন করে ইন্টারভিউ নিয়ে যোগ্যদের নেওয়া হবে। সর্বশেষ মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে অনেক কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবছি। নির্বাচনের আগেই যোগ্যদের পূর্ণ সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’

কিছুদিন আগে শাকিব খান বলেছেন, যদি সিনেমা না থাকে সমিতি কিংবা সংগঠন দিয়ে কী হবে! এই বক্তব‌্যের সঙ্গে অনেকে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু মিশা সওদাগর এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তাদের হয়তো বোঝার ভুল। সমিতি শিল্পীর জন্য, চলচ্চিত্রের জন্য নয়। শিল্পী সমিতি শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করে। এটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক একটি সংগঠন। এর সঙ্গে কারো স্বার্থ জড়িত নেই। প্রযোজক-পরিচালকরা সিনেমা নিয়ে ভাববেন। আমাদের কাজ হচ্ছে চরিত্রটি ঠিকমতো পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। শিল্পীদের জন্য সমিতি দরকার আছে।’

দীর্ঘ অভিনয় ক‌্যারিয়ারে অসংখ‌্য ব‌্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন মিশা সওদাগর। পেয়েছে অসংখ‌্য ভক্তের ভালোবাসা। তবু ক‌্যারিয়ারের এই পর্যায়ে বিশেষ কোনো সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা আছে কিনা? জবাবে মিশা সওদাগর বলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা করে লাভ কি? নতুন সিনেমা, শিল্পীর অভাবে ইন্ডাস্ট্রিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! নতুন নতুন লোক না আসলে তো ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে না। হুমায়ুন ফরিদী, মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, এটিএম শামসুজ্জামান, সাদেক বাচ্চুসহ আরো অনেকেই ছিলেন। তখন কাজে অনেক প্রতিযোগিতা হতো। এখন আমি একা কী করব? একজন শিল্পী দিয়ে তো ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কম করে হলেও প্রধান চরিত্রের জন্য ৩০ জন অপরিহার্য শিল্পী লাগবে। এক সময় আনন্দ পেলেও এখন একা কাজ করে তৃপ্তি পাই না। যেখানে সিনেমা নেই, সেখানেও আমার হাতে অসংখ্য নতুন সিনেমার প্রস্তাব। এফডিসি প্রবেশ করেই নতুন তিনটি সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি। নতুন আরো শিল্পী আসতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে।’

আমাদের আড্ডার ফাঁকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। জানান দেন—স‌্যার, সেট রেডি। এরপর বিদায় নিয়ে শুটিংয়ে ফিরে যান দাপুটে এই খল অভিনেতা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়