ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

অন্যের কর্মসংস্থান করতেই নিশাতের অনলাইনে ব্যবসা

হৃদয় তালুকদার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ৮ মে ২০২৪  
অন্যের কর্মসংস্থান করতেই নিশাতের অনলাইনে ব্যবসা

নিশাত তাসনিমের উদ্যোক্তা-যাত্রার শুরু অনেকটা শখের বসেই। তবে সেই শখের সঙ্গে স্বপ্ন মিশিয়ে নিশাত সৃষ্টি করতে চান অনন্য উদাহরণ। শুধু নিজের জন্যই নয়, অন্যদের কর্মসংস্থান করতেও নিশাত তার ব্যবসার পরিসর বড় করছেন। চলার পথ তার মসৃণ ছিল না। চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। এমনকি সমাজের কটূক্তিও সইতে হয়েছে তাকে। সব বিপত্তি মাড়িয়ে নিশাত আজ সফল উদ্যোক্তা। তার পণ্য শুধু দেশে নয়, পৌঁছে যাচ্ছে ইউরোপ থেকে আফ্রিকায়। 

নিশাতের বেড়ে ওঠা জামালপুরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেছেন।  পড়ালেখা শেষে অন্যরা যেখানে চাকরির পেছনে ছোটেন, সেখানে ব্যতিক্রম নিশাত। করোনাকালে তার  সময় কাটতো পরিবারের সাথে। এ সময় তার মামি তাকে অনলাইনে ব্যবসা শুরুর পরামর্শ দেন। তবে সেই প্রস্তাব মনে ধরেনি তার। মূলত অভিজ্ঞতা না থাকায় সাহস পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে নিশাতের সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি। অনলাইনে ব্যবসা শুরুর উদ্যোগ নেন। প্রথমে খোলেন ‘দুয়ার’ নামে একটি ফেসবুক পেজ। সেখানে তিনি বিক্রি করার উদ্যোগ নেন দেশীয় পণ্য। এভাবেই যাত্রা শুরু নিশাতের।

পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন বিজনেস চলতে থাকে নিশাতের। প্রথমে সারা না পেলেও, ধীরে গ্রাহক পেতে শুরু করেন তিনি। হাতের তৈরি পণ্যের জন্য ভরসার নাম হয়ে ওঠে নিশাতের দুয়ার। তবে পড়াশোনা চলিয়ে ব্যবসা সামাল দিতে তাকে বেগ পেতে হচ্ছিল। এরই মধ্যে একদিন ঘুম থেকে উঠে নিশাত দেখেন তার ফেসবুক পেজ আর নেই! বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তার মন। সিদ্ধান্ত নেন আর ব্যবসা করবেন না অনলাইনে। কিন্তু কয়েকমাস চলার পর বন্ধুর পরামর্শে নতুন করে পেজ খুলে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন। 

জামালপুর-শেরপুরের নানা বাহারী পোশাক ও হাতের কাজের পণ্য নিয়েই নিশাতের ব্যবসা। এ কাজে তার মা সবসময় সহযোগিতা করেছেন। যে কোনো পোশাকের রং, ডিজাইনসহ সব কিছুতেই মায়ের পরামর্শ নেন তিনি। দেশীয় পণ্যের মধ্যে তার কাছে নকশিকাঁথা, থ্রি পিস, কামিজ, ব্যাগ, কুশন কাভারসহ প্রায় সব ধরনের হস্তশিল্প রয়েছে। 

নিশাতের এই উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে গ্রামীণ অনেক নারীর। নিশাতের পছন্দ করা ডিজাইন জামা বা অন্যান্য পণ্যে ফুটিয়ে তুলতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন প্রায় ৫০০ কর্মী। প্রতি মাসেই এদের দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য তৈরি করে বিক্রি করছেন নিশাত। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, জার্মানিসহ নানা দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা অর্ডার করছেন এসব পণ্য। এক সময় যে ব্যবসা থেকে হাতখরচ ওঠাতেও কষ্ট হতো, এখন সেখান থেকেই নিশাত মাসে আয় করছেন লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে নিশাত বলেন, একসময় ব্যবসাটা শুরু করলেও সেভাবে সাহস পাচ্ছিলাম না। মা অনেকটা পাশে থেকে সাহায্য করেছে। আমার পণ্য এখন দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে আমার এই কাজের মাধ্যমে। গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি এতেই আমি খুশি।

আগে আমরা পড়াশোনা শুধু জবের জন্য করতে হবে এমন ভাবতাম । কিন্তু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এসে বুঝলাম, পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো উদ্যোক্তা হতে চাইলে অবশ্যই অনেক বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। আপ টু ডেট না থাকলে টিকে থাকা কঠিন। আমরা যারা স্বল্প পরিসরে শুরু করি তাদের ব্যবসা বড় করার জন্য অবশ্যই বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, সরকারি ঋণ, ব্যাংক ঋণ, শেয়ার বাজার ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাপোর্ট থাকতে হবে।   

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে নিশাত বলেন, প্রথমে আপনার মূলধনের উৎস নির্ধারণ করুন। ব্যাংক লোন নিলে আপনাকে অতি উচ্চ মাত্রায় সুদ দিতে হবে। যা কিনা প্রাথমিক অবস্থায় আপনার জন্য বড় বাঁধা। তাই চেষ্টা করুন আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মূলধন জোগাড় করার। সব শেষে বলতে চাই, এখন অনেক প্রতিযোগিতা অনলাইন প্লাটফর্মে। যারা নতুনভাবে কাজ শুরু করতে চান, তাদের অবশ্যই কাস্টমার ডিমান্ড অনুযায়ী ইউনিক টাইপ পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়