ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফাওজিয়া ফারিয়া ক্যাম্পাসের ‘কেক আপা’ 

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ১৬ মে ২০২৪   আপডেট: ১৭:১০, ৩ জুন ২০২৪
ফাওজিয়া ফারিয়া ক্যাম্পাসের ‘কেক আপা’ 

উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রাপথ সবার সমান হয় না। অনেকে পুঁজি নিয়ে শুরু করেন, অনেকে শুরু করেন শূন্য হাতে। তবে বেশিরভাগ সময় গল্পটা হয় সংগ্রামের। সেই সংগ্রামে কেউ সফল হলে তাদের কথা ছড়িয়ে পড়ে, যারা সফল হন না তারা হারিয়ে যান। ফাওজিয়া ফারিয়া হারিয়ে যাননি। 

ফারিয়া যখন ভাবলেন নিজে কিছু করবেন, অন্য অনেকের মতো পুঁজি ছিল তার প্রথম বাধা। তবে তিনি দমে যাননি। শখের স্বর্ণের কানের দুল বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করেন তিনি। 

ফাওজিয়া ফারিয়ার বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহের মহেশপুরে। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হিসেবে সবাই তাকে চেনেন তার তৈরি হোমমেইড কেকের জন্য। ফারিয়ার কেকের গ্রাহক বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। 

২০১৮ সালে এইসএসসি পাস করার পর অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন ফারিয়া। তখন অপ্রিয় করোনাভাইরাসের কাল। করোনার দিনগুলোতে আতঙ্কে সময় কাটানোর পাশাপাশি ইউটিউবে দেখছিলেন বাহারী রকমের রান্নার রেসিপি। একসময় সেসব আয়ত্তে নেওয়া শুরু করেন ফারিয়া। তখনই তিনি ভাবতে থাকেন উদ্যোক্তা হওয়ার কথা। নিজের একটি বেকারির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিন। ফারিয়া হাঁটতে থাকেন তার সংগ্রাম আর স্বপ্নের পথে।

ফারিয়া শুরুতে কেক তৈরির বেসিক ধারণা নিতে যান বাড়ির পাশের একজন অভিজ্ঞ বেকারি ব্যবসায়ীর কাছে।  সেই ব্যবসায়ী সেদিন ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন, ‘খুব ব্যবসা করছো নাকি শুনলাম তা কয় পাউন্ড কেক বেঁচলে?  অনলাইনে কেউ কেকের মতো জিনিস কেনে?’

ফারিয়া তখনও কেক বানাতে পারতেন না। এ কথা শোনার পর তিনি অনুৎসাহিত করে বলেছিলেন, ‘সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয় না, পড়ালেখা করছো পড়ালেখা করো।’

সেদিন মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন ফারিয়া। মনে জেদ চেপে গেল। এরপর নিজেই চলে গেলেন স্বর্ণের দোকানে। বিক্রি করলেন কানের দুল। সেই টাকা দিয়ে কিনে আনলেন কেক বানাতে যা যা লাগে সব। এরপর ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে শুরু হলো তার প্রশিক্ষণ। তবে শুরুতে তার বানানো কেক নষ্ট হয়ে যেত, মনমতো হতো না। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। এ দিকে কেক বানাতে ডিম, চিনি, ময়দাসহ নানা জিনিস নষ্ট করায় বাড়ি থেকেও শুনতে হচ্ছিল নানা কথা। কিন্তু ওই যে বললাম- অদম্য ইচ্ছে শক্তি তাকে লক্ষ্য থেকে টলাতে পারেনি। ফলে একদিন হঠাৎ ফারিয়া দেখলেন কেক একদম পারফেক্ট হয়েছে। তিনি শতভাগ বিশ্বাস ফিরে পেলেন। 

ফারিয়া এখন এলাকার গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিচিত ‘কেক আপা’ নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র জুনিয়র তাদের প্রিয় দিনগুলো উদযাপনের জন্য ফাওজিয়া ফারিয়ার দ্বারস্থ হন। তিনি যে কোনো ধরনের কাস্টমাইজড কেক ক্রেতার পছন্দ মতো বানিয়ে দিতে পারেন। মাস গেলে আয়ও মন্দ হয় না। ফারিয়ার স্বপ্ন একদিন তার বানানো কেক সব মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকবে। বড় বেকারি হবে। সেখানে কাজ করবে অসহায়, সম্বলহীন মানুষ।

ফাওজিয়া ফারিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের মন ভালো করে দিতে পারে পছন্দসই খাবার। মানুষ যখন তার পছন্দসই কেক পায় তখন যে আর্শীবাদ বা প্রার্থনা তার জন্য করে তা কোটি টাকার থেকেও তুচ্ছ।

ফাওজিয়ার মতে, যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে যে কোনো ক্ষুদ্র কাজকেও ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন, ধৈর্য, ইচ্ছা আর অপমান সহ্য করার ক্ষমতা।

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়