ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

মণিপুরি পণ্যে নতুনত্ব আনতে চান রোকসানা

মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৮ মে ২০২৪   আপডেট: ২০:৩১, ১৮ মে ২০২৪
মণিপুরি পণ্যে নতুনত্ব আনতে চান রোকসানা

ফেনীর মেয়ে রোকসানা আক্তার স্বামীর চাকরির সুবাদে থাকেন সিলেটে। এর আগে, স্নাতকোত্তর শেষে ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর সরকারি চাকরির আশায় সেটা ছেড়ে দেন। পরে কোনো চাকরিই আর করা হয়নি তার। চাকরি না হলেও সংসার সামলানোর পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার সঙ্গে পথচলা শুরু করেছেন।

উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন রোকসানা। তিনি বলেন, উদ্যেক্তা হওয়ার চিন্তা হুট করে মাথায় আসেনি। আমি একটা প্রাইভেট ব্যাংকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দু’বছর চাকরি করি। সরকারি চাকরি আশায় ওটা ছেড়ে দিই। বাসায় থেকে বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। করোনা শুরু হয়ে গেলে চাকরির পরীক্ষাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এমন সময় আমি বেবি কনসিভও করি। সবমিলিয়ে চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে সন্তান জন্মের পর তাকে পুরোটা সময় দেওয়ার চিন্তা করি। যেহেতু বরের বদলী হবার সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও তার সঙ্গে ছুটতে হবে। সেজন্য চিন্তা করলাম, বেবি হোক। কয়েকটা মাস অপেক্ষা করে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করবো।

যেই ভাবা, সেই কাজ। ২০২১ সালের এপ্রিলে সন্তানের বয়স পাঁচ মাস হতেই তিনি তার উদ্যোগ শুরু করেন। ২০১৯ সালের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সুতার কাজ’ নামে পেইজ খুলেছিলেন। সে পেজ দিয়েই তিনি পুরোদমে কাজ শুরু করেন। মূলত এর মাধ্যমেই তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়।

প্রথমদিকে রোকসানা জামদানী, মণিপুরি এবং নিজস্ব উড ব্লক করা শাড়ি নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছিলেন। পরবর্তীতে স্বামীর চাকরির কারণে সিলেট শহরে থাকায় মণিপুরি পণ্যের দিকেই পুরোপুরি নজর দেন তিনি। তবে মণিপুরি পণ্য সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিলো না।

অপরিচিত বিষয়টি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমার মণিপুরি পণ্য খুব পণ্য ভালো লাগে। সেখান থেকেই এ বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ জাগে। এছাড়াও ২০২০ সালে করোনা শুরু হলে মণিপুরি শিল্পটা হারিয়ে যেতে বসেছিল। শিল্পটা যাতে হারিয়ে না যায়, সে লক্ষ্যে এর সঙ্গে কাজ করছি।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্যান্যদের মতো তাকে ওভাবে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয়নি। বরং তিনি পরিবারের সবার সহযোগিতা পেয়েছেন। বিশেষ করে তাকে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট করেছেন তার স্বামী, শাশুড়ী, মা ও বড় বোন।

তিনি বলেন, শুরুর দিকে পণ্যগুলো আমার স্বামীই ডেলিভারি করে আসতো। আবার তাঁতি ও ভেন্ডরের কাছ থেকে আসা পণ্যগুলো সে (স্বামী) নিয়ে আসতো। এভাবে সে পাশে থেকেছে শুরু থেকেই। এখনো তার সহযোগিতার কোনো কমতি নেই।

এ উদ্যোক্তার বেশ কয়েকজন পরিচিত তাঁতি আছেন। গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন ডিজাইন নির্ধারণ করে দেন। নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ি তাঁতিরা তাকে পণ্য সরবরাহ করেন। তবে অনেক সময় তাঁতিরা চাহিদা পূরণ করতে না পারলে তাকে ভেন্ডরের শরণাপন্ন হতে হয়। এভাবে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন এ নারী উদ্যোক্তা।

এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, পণ্য ভালোই বিক্রি হয়, তবে লাভের পরিমাণ খুব সীমিত। কারণ আমি লাভ নিয়ে ওতোটা ভাবি না। ক্রেতাদের সঠিক পণ্য ন্যায্য দামে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে আমি মণিপুরির নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করছি। সে লক্ষ্যে আমি কামিজ, কুর্তি, গাউন, ব্লাউজ, বেবি ড্রেস, শীতের ব্লেজার, কটি, কুশন কাভার, টেবিল রানার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি। এসব পণ্যের জন্য আমি নিজে ডিজাইন করে তাঁতিদের দিই। তারা আমাকে সেভাবেই তৈরি করে দেন। তবে তাঁতিদের ঐতিহ্যগত ডিজাইনগুলোও বেশ ভালো। আসলে ক্রেতার চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হয়। 

এ নারী উদ্যোক্তা তার উদ্যোগের পরিধি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছেন। এখনও কোনো ধরনের ঋণ না নিলেও উদ্যোগ বৃদ্ধির স্বার্থে সরকার যে সুবিধা রেখেছে, সে অনুযায়ি ঋণ গ্রহণ করবেন। তবে তিনি মনে করেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের শর্ত আরেকটু শিথিল করা প্রয়োজন।

পণ্যের সোর্সিং থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তিনি নিজেই করে থাকেন। তিনি নিজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করলেও এর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ইচ্ছে হলো আর উদ্যেক্তা হয়ে গেলাম, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। যত জানব, তত উদ্যোগের সম্মৃদ্ধি হবে। আমি না জেনেবুঝে শুরু করলেও কাজ করতে করতে শিখেছি এবং এখনো শিখছি।

তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন তার ‘সুতার কাজ’ একটা ব্র‍্যান্ড হবে, যেখানে মণিপুরিদের নিজস্ব সব পণ্য থাকবে এবং সেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবে।

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়