বুড়িগঙ্গা রক্ষায় সরকারের আরেক দফা উদ্যোগ
|| রাইজিংবিডি.কম
কারখানার দূষিত বর্জ মিশ্রিত হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়
এম. শাহজাহান
ঢাকা, ৩১ জুলাই: বুড়িগঙ্গাকে রক্ষায় সরকার নতুন কিছু উদ্যেগ গ্রহন করেছন। বুড়িগঙ্গা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের বৈঠকে এ বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সিদ্ধান্ত সমুহের মধ্যে রয়েছে, ঢাকার ট্যানারিসহ শিল্প কারখানার বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা বন্ধ করতে আইনি পদক্ষেপ নেয়া৷ বর্জ্য ফেলা বন্ধ না করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে ৷ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরিতে কারখানাগুলো একমাস সময় পাবে৷
প্রসঙ্গত, ঢাকা শহর থেকে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গায় শিল্পসহ নানা ধরনের ৪ হাজার ৫`শ টন কঠিন বর্জ্য ফেলা হয়৷ ২০ হাজার টন ট্যানারি বর্জ্য ফেলা হয়, যার মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আছে৷ ফলে বুড়িগঙ্গার পানিতে এখন অক্সিজেন এতটাই কম যে সেখানে মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না৷
বাংলাদেশে ২৭০টি ট্যানারির মধ্যে ২`শ ট্যানারিই রাজধানীর হাজারীবাগে৷ ট্যানারির কারণে হাজারীবাগের ৫০ একর এলাকার মাটি এখন পুরোপুরি রাসায়নিক বর্জ্যে পরিণত হয়েছে৷ এখানকার বাতাস, পানি সবই দূষিত৷ তাই হাজারীবাগ এলাকায় যারা বসবাস করেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে৷ তারা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন৷
এমনেই অবস্থায় বুড়িগঙ্গা মতৃ্প্রায়। মানুষের জন্যেও তা যখন মৃত্যুপুরীতে পরিনত তখন কিছু সামাজিক সংগঠনসহ পরিবেশ বান্ধব সচেতন মানুষ বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে। প্রেক্ষিতে সরকারের কিছুটা দৃষ্টি খুলে।
নৌপরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি জানান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বুড়িগঙ্গাকে দূষণ এবং দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নেবে৷ আগামী এক মাসের মধ্যে ট্যানারিসহ সব শিল্প কারখানাকে তাদের বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে হবে৷ নয়তো বুড়িগঙ্গায় তাদের বর্জ্য ফেলার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হবে৷ যারা বর্জ্য ফেলার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
মন্ত্রী আরো বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ তিনি ট্যানারিগুলোকে ঢাকার জনবহুল এলাকা হাজারীবাগ ছেড়ে সাভারে তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় চলে যেতে বলেন৷ সাভারে টানারিগুলোর জন্য ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১০ বছর আগে৷
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা-র সমন্বয়কারী ইকবাল হাবিব জানান, ২০০৩ সালে হাইকোর্ট হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে সরিয়ে নিতে বলেছেন৷ এরপর সরকার এবং ট্যানারি মালিকরা মিলে অন্তত ১০ বার সময় নিয়েছে৷ এতে প্রমাণিত হয়, সরকার বা ট্যানারি মালিক কেউই এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়৷ তবুও শেষ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা রক্ষায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা অভিনন্দনযোগ্য৷ তবে পাঁচ বছর আগে এই সিদ্ধান্ত হলে বুড়িগঙ্গার এই করুণ পরিণতি হতো না৷
তিনি আরো বলেন, বুড়িগঙ্গার পানিতে এখন লেড ও ক্যাডমিয়ামসহ ৬ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে৷ তা শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, আশেপাশের ৫৬ কিলোমিটার নদীকে দূষিত করছে৷ তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার এই দূষিত পানিতে ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷
উল্লেখ্য, বুড়িগঙ্গার পাশে অবস্থিত কারখানা গুলো দিনের পর দিন দুষিত করে আসেছ বুড়িগঙ্গাকে। প্রভাবশালীদের এহেন স্বার্থসিদ্ধ কাজে দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে বুড়িঙ্গার তীরে বসবাসরত ৪০ লক্ষ মানুষ। সাধারন এসব মানুষদের হয়ে সরকার ইতিমধ্যে কয়েক দফা পদক্ষেপ গ্রহন করলেও কারখানার দুষিত পদার্থ প্রবাহ থেকে বিরত থাকেনি কর্তৃপক্ষ। এমন কি আদালতের নির্দেশ অমান্য করেও কারখানার এসব দুষিত পদার্থ প্রবাহের লাইন বুড়িগঙ্গার দিকেই রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর দুষনরোধ থেকে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করার কথা বলে আসছেন। ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে নতুন পদক্ষেপে বুড়িগঙ্গা রক্ষায় কতটুকু সফল হবেন সরকার, তাই দেখার অপেক্ষায় বুড়িগঙ্গা পাড়ের ৪০ লক্ষ মানুষ।
রাইজিংবিডি/ এমএস
রাইজিংবিডি.কম