ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

নিগার সুলতানা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

বাবা- দুটি অক্ষরে গঠিত শব্দটির মর্মার্থ এত বিশাল যে, তা কোনো সংজ্ঞায় বা ভাষায় আবদ্ধ করা যায় না। বাবা তো সেজন- যার হাত ধরে শেখা যায় জীবনে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েও কীভাবে উঠে দাঁড়াতে হয়। কীভাবে স্বপ্ন পূরণের দূর্গম পথে পাড়ি দিতে হয়।

মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তার সৃষ্টিকে পাঠিয়ে দেন বাবা নামক মানুষটির কাছে। বাবা তার সন্তানের ভরণ-পোষণ, ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্খা, ভালো-খারাপ সকল দিক দেখভাল করার নিঃস্বার্থ দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের সুখ, ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্খা, ভালো লাগা, পছন্দের সবকিছু হাসি মুখে নির্দ্বিধায় বিসর্জন দিতে সামান্যতমও কুণ্ঠাবোধ করেন না।

সন্তানকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি হারতেও রাজি থাকেন। সন্তানের সুখই যেন বাবার সুখ। সারাদিন কর্মব্যাস্ততা শেষে বাড়ি এসে সন্তানের মুখে হাসি দেখলে নিমিষেই তার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

বাবা মানে, উত্তপ্ত রৌদ্রে মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া। বাবা মানে, আকাশ সমান মায়া। বাবা শব্দটি উচ্চারণ করলে মনটা কোমল হয়ে ওঠে। এ যেন, আস্থায় উচ্চারিত এক প্রিয় শব্দ। বাবার ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সকল ভালোবাসা ম্রিয়মান।

বাবা শুধু দিয়েই যান, কখনো পাওয়ার আশা করেন না। বাবা হয় জ্যোতিষতুল্য। কখন কী প্রয়োজন তা বলতে হয় না। তিনি নিজে থেকেই সময়ের আগে তা নিয়ে আসেন।

আমি একজন মধ্যবিত্ত, আদর্শবান ও সেরা বাবার কথা বলছি। সন্তানকে ভালো রাখার জন্য বাবা নামক মানুষটি সীমাহীন কষ্ট করে যান। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা এই মানুষটি দিন রাত এক করে, খেয়ে না খেয়ে পরিশ্রম করেন। শুধুমাত্র সন্তানের সুখের জন্য। কখনও ভালো কিছু খেতে গেলে সন্তারের চেহারা তার মানসপটে ভেসে ওঠে। নিজে আর খান না, সন্তানের জন্য রেখে দেন। সন্তান খেলে তাতেই তার মন ভরে, পেট ভরে।

এমন অনেক বাবা আছেন যারা ঈদ-পার্বণে নিজের জন্য নতুন পোশাক কিনতে পারেন না। নিজের জন্য কিনতে না পারলেও ঠিকই সন্তানের জন্য নতুন পোশাক কিনে আনেন তারা। নতুন পোশাকে সন্তানকে দেখই তৃপ্ত হয় তাদের চোখ-অন্তর। সন্তানের খুশিই তাদের খুশি।

দুপুরে খাবার না খেয়ে টাকা বাঁচিয়ে সন্তানের জন্য মজার কিছু নিয়ে আসেন বাবা। কারণ একটাই, সন্তানের মুখের হাসি দেখা। বাবারা ছুমন্তর ছু বলে কখনো জাদুকরী সারপ্রাইজ দেয়। কখনও নিজের জন্য আনা প্যাকেটটি খুলে দেখায় তার সন্তানের জন্য এনেছেন বলে। সন্তান মানুষ করতে বহু কষ্ট, ত্যাগ- তিতিক্ষা করে থাকেন। একজন আদর্শ বাবাই হন এমন মহৎ হৃদয়ের অধিকারী।

সকালে সূর্যের আলো যেভাবে তার দীপ্তি ছড়ায় বিকালে সেভাবেই তা হ্রাস পেতে থাকে। মানব জীবনটা ও সেই সূর্যের মতো। জীবনের শুরুতে রঙিন হলেও জীবন সায়াহ্নে তা ক্রমশ সাদামাটা হতে থাকে। একটা সময় বাবারা বৃদ্ধ হতে থাকে, সন্তানরা বড় হতে থাকে। তখন তাদের ভালোবাসা শৈশব কালের মতো প্রকাশ পায় না। তাতে কি ভালোবাসা কমে যায়? না বরং তা সুপ্ত অবস্থায় থাকে।

ছোটো বেলায় সামান্য অসুখ হলেও বাবা পেরেশানিতে থাকতেন। ওষুধ এনে দিতেন, সেবা-যত্ন করে সুস্থ করে তুলতেন। সেই বাবা যখন বৃদ্ধ হবে, তখন প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য হবে বাবার সেবা যত্ন করা। ঠিক যেমনটা সন্তানের জন্য বাবা করেছিলেন।

সন্তানের কটু কথায় বাবার মনে কষ্ট জমলে সেই সন্তান কখনো বড় কিছুতে সফল হতে পারে না। আবার সন্তানের কাজে খুশি হয়ে বাবা দোয়া করেন, সন্তান সফল হলে বাবার মুখেও হাসি ফোটে। বাবা কেমন আছেন, সেটা জিজ্ঞেস না করে সন্তানের উচিত বাবাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নেওয়া।

বাবার মন কী চায় তা জেনে, বাবার মন ভালো রাখার দায়িত্ব নেওয়া। বাবাকে ভালোবেসে পরিবারের সবাই মিলে সুখে শান্তিতে থাকা। বাবার সন্তুষ্টিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি নিহিত। ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য আসুন বাবার সন্তুষ্টি অর্জন করি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ঢাকা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ