ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আমিই বাবার সেরা গিফট

সাধন সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আমিই বাবার সেরা গিফট

সেই শিশুকাল থেকে কতো বিশেষ স্মৃতিই না জমা হতে থাকে জন্মদাতার সঙ্গে! বাবা, মনে পড়ে তুমি সাইকেলে চালকের আসনে বসে বাজারে যাচ্ছো, আমি পেছনে বসে আছি! দেখতে দেখতে দেড় যুগ কেটে গেছে, অথচ আজও তুমিই আমার চালক। তুমিই আমার অফুরন্ত প্রাণশক্তি। কলেজ জীবন শেষ করার পর যখন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমার চেয়ে যেন তুমিই বেশি খুশি হয়েছিলে। সে ক্ষণ কি ভোলা যায়?

ঢাকাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেসে’ প্রথম যেদিন একা খুলনা থেকে ঢাকা আসি সেদিন বাড়ির একমাত্র মুঠোফোনটি যোগাযোগের জন্য আমার বুক পকেটে তুলে দিয়েছিলে। স্টেশনে গার্ডের সবুজ পতাকা উড়ছে। হুইসেল বাজছে। তোমার-আমার দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে, মুহূর্তের হাসিমাখা মুখে তুমি আবেগ সামলে নিলে। ঢাকায় পড়াশোনার ফলে বছরে দুই-তিনবারের বেশি বাড়ি যাওয়া সম্ভব হতো না। কত কষ্টই না বুকে চাপা দিতে হয়েছে! 

তোমাকে বুঝতে পারার পর থেকেই ‘বাবা দিবস’ আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। প্রত্যেক বছর এ দিনে বাবার জন্য কিছু সময় আলাদা করে রাখি। যদিও বাবাকে একক কোনো দিনে নয়, বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি দিনের জন্য। ‘ঢাকা-খুলনা’র কোনো বাস যখন রাস্তায় দেখি তখন হৃদয়ে শূন্যতা অনুভব করি এই ভেবে যে, যদি আজই যেতে পারতাম বাড়িতে! বাড়ি থেকে প্রথম প্রথম ঢাকার উদ্দেশ্যে আসার পথে বিদায় বেলা বাবা তোমার দিকে তাকাতে পারতাম না। সারাটা পথ কেন জানি তোমার মুখ ভুলতেই পারতাম না। ঢাকা এসে কখনও আমি ফোন করতে ভুলে গেলেও তুমি ভুলতে না।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার অর্থকষ্ট, দুঃখ-বেদনার কোনো কথা বাবাকে কখনোই জানাতাম না! হয়তো বাবাও তার ছাত্র জীবনে একই কাজ করতো! একটি বিষয়ে বাবার সাথে একমত না হলে গঠনমূলক আলোচনা হতো, বিতর্ক হতো। পরক্ষণে ভাবতাম এ কি করলাম! তখন আবার বাবাকে ফোন দিয়ে মনটা হালকা করতাম। একবার বাবার শরীর খারাপ, আমার বাড়ি যেতে দেরি হচ্ছে। বাবা বলল, ‘এখন বুঝবি না, যখন বাবা হবি তখন বুঝবি।’ আমি যখন ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতাম তখন বাবা আমার পছন্দের জিনিসগুলো আগেই বাজার থেকে নিয়ে আসতো। যেন বাড়ি ফিরে আমি পছন্দের রান্না করা খাবার পাই। কোনো বিশেষ কারণে বাবার জন্য কোনো গিফট কিনতে যখন বাবাকে ফোন দিতাম তখন বাবা কোনো গিফট নয়, তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা বলতো। আমিই নাকি বাবার সেরা গিফট!

যখন এই লেখা লিখছি তখন হঠাৎ টেবিলের ওপরে আমার মুঠোফোনটি বাজছে, ‘তুই কবে আসবি? অনেক দিন তো হয়ে গেল!’ আমি কোনো ভণিতা না করে বকা খাওয়ার ভয়ে কম কথায় ফোন রেখে দিই। বাড়ি যাওয়ার ক্ষণ গণনা শুরু করি। বাবা, সেই শিশুকাল থেকে তুমি আমার প্রতি তোমার গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছো। আমি কি পারবো তোমার প্রতি শতভাগ দায়িত্ব পালন করতে? পারতেই হবে। কেননা আমি যে তোমারই বাবা!

লেখক: পরিবেশ কর্মী

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়