ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শিশুদের বই সহজ নয়, এক্সপেন্সিভ : মিতিয়া ওসমান

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১২:৩৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
শিশুদের বই সহজ নয়, এক্সপেন্সিভ : মিতিয়া ওসমান

ময়ূরপঙ্খি। শিশুকিশোরদের উপযোগী বই প্রকাশ করে খুব কম সময়েই প্রশংসিত এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। শিশুসাহিত্য নিয়ে তাদের কাজ। ২০১৪ সালে মিতিয়া ওসমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ময়ূরপঙ্খি বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই বই প্রকাশ করে। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত ময়ূরপঙ্খির স্বত্ত্বাধিকারী মিতিয়া ওসমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুজাহিদ বিল্লাহ।

মুজাহিদ বিল্লাহ : ময়ূরপঙ্খি শিশুকিশোরদের জন্য বই প্রকাশ করে। আপনাদের শুরুর কথাটি জানতে চাই।

মিতিয়া ওসমান : আমাদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। আমরা অফিসিয়ালি যাত্রা শুরু করি ২০১৬ সালের বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে। আমাদের শুরু থেকেই ভাবনা ছিল শিশুসাহিত্য নিয়ে কাজ করব। সবার নিজস্ব পছন্দ থাকে। আমাদের পছন্দের জায়গা এটি।

মুজাহিদ বিল্লাহ : প্রকাশক হবেন। এই ভাবনাও কি পূর্বনির্ধারিত?

মিতিয়া ওসমান : এর একটা কারণ হলো, আমরা পারিবারিকভাবেই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা প্রকাশক, আমার চাচা প্রকাশক- সেখান থেকেই চিন্তাভাবনা। তাছাড়া এটা আমাদের প্যাসন, করতে ভালো লাগে দেখেই করি।

মুজাহিদ বিল্লাহ : শিশুকিশোরদের জন্য বই প্রকাশের ক্ষেত্রে পা-ুলিপি বাছাই এবং ইলাস্ট্রেশন গুরুত্বপূর্ণ।

ময়ূরপঙ্খি : অবশ্যই। আমরা হাশেম খান, রফিকুন নবী যাদের দেখেছি তারা মূলত শিশুতোষ বইয়ের দিকপাল। তারা সবসময় হাতে কাজ করতেন এবং নিজস্ব স্টাইল তৈরি করতে পেরেছিলেন। কাজ দেখলেই বোঝা যেত এটা রফিকুন নবীর, এটা হাশেম খানের কাজ। এখন নতুন জেনারেশন এসেছে, কাজটির সঙ্গে প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। মানুষ কম্পিউটারে কাজ করছে। বইগুলো এখন সুন্দও রূপ পেয়েছে বাইরের দেশের মতো। আগের চেয়ে প্রিন্টিং খুব উন্নত হয়েছে। আগে প্রিন্টিং খুব ভালো ছিলো না, এখন উন্নত হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে এখনকার যারা ডিজিটালি কাজ করছে সেগুলো শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে। আমি ভালো-খারাপ বলব না বা অতীতের সঙ্গে এখনকার কাজের তুলনা করব না।

মুজাহিদ বিল্লাহ : এখন কারা ভালো লিখছেন?

ময়ূরপঙ্খি : আমার মত আমি বলব না ( হেসে)। আমাদের মূল লেখক, যার মাধ্যমে আমরা শুরু করেছি তিনি শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন। তাঁর বই দিয়েই আমরা শুরু করেছি। ধ্রুব এষের বইও করেছি। মূলত সিনিয়রদের মধ্যে আখতার হুসেন এবং ধ্রুব এষ। তারপর এখন অনেক ইয়াং জেনারেশনের লিখছে। তাদের মূল্যায়ন করার আগে সময় দিতে হবে।

মুজাহিদ বিল্লাহ : শিশুদের বইগুলো আমাদের দেশে খুব অবহেলা করে ছাপা হয়। এ বিষয়ে কী বলবেন?

ময়ূরপঙ্খি : আমাদের বই দেখলে এই অভিযোগ আপনি করতে পারবেন না। আমরা খুব যতœ সহকারে অনেক ভালোভাবে বই প্রকাশ করি। এ জন্য তুলনামূলকভাবে আমাদের বইয়ের দাম বেশি হয়। আসলে শিশুতোষ বই কিন্তু সহজ নয়, এটা এক্সপেন্সিভ। এ ধরনের বই প্রকাশ করতে বাজেট প্রয়োজন। এমন না যে আপনি বছরে ১০০টা বই বের করতে পারবেন। বেশি হলে ১০-১৫টা বই বের করতে পারবেন।

মুজাহিদ বিল্লাহ : পাঠকের সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

ময়ূরপঙ্খি : ফেসবুক, মোবাইলের যুগ। শিশুরা ইউটিউবে বেশি আসক্ত। শিক্ষিত বাবা-মা যারা তারা চায় তাদের ছেলেরা বই পড়–ক। বইমেলায় আমরা বই কেনার জন্য শিশুদের আগ্রহ দেখি। অবশ্য আগের তুলনায় আগ্রহ কমছে আমি বলবো। কারণ বই পড়াটাই তো তুলনামূলকভাবে কমে যাচ্ছে। বাবা-মায়েরাই বই পড়ে না, শিশুদের কি পড়াবে!

মুজাহিদ বিল্লাহ : আপনি বললেন আপনারা বংশপরম্পরায় প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত। আপনার কি মনে হয় বড়দের সাহিত্য নাকি ছোটদের সাহিত্য নিয়ে কাজ করা ভালো?

ময়ূরপঙ্খি : আসলে দুটোই সহজ, দুটোই কঠিন। যে যেটা করে এক্সপার্ট। যে যেটা করে আনন্দ পায়। এটা হচ্ছে নিজের পছন্দের উপর। শিশুসাহিত্যে সব চেয়ে বড় সমস্যা, আমরা প্রকাশনায় অনেক কম লোক দেখি। এর কারণ ইনভেস্ট। ছোটদের প্রকাশনায় ইনভেস্ট অনেক বেশি লাগে। শিশুদের একটা ফোর কালার বই বের করতে যে খরচ হয় সেই টাকা দিয়ে বড়দের দুই তিনটা বই বের করা যাবে।

মুজাহিদ বিল্লাহ : ছোটদের বইয়ের অলঙ্করণও খরচের ব্যাপার- অনেক প্রকাশক বলেন। আবার এখানেও যতেœর অভাব দেখা যায়।   

ময়ূরপঙ্খি : আমি এ কথা মানবো না যে যতœ নিয়ে প্রচ্ছদ তারা করেন না। কারণ তাদের আসলে সময় দেয়া হয় না। আমাদের দেশে প্রচ্ছদ শিল্পী কিন্তু খুব একটা নেই। বেশি হলেও ১০ জন। বইমেলায় তাদের প্রচুর প্রেসার থাকে। এদের অনেকে আবার ইলাস্ট্রেশন করেন না। অনেকে ইলাস্ট্রেশন করেন প্রচ্ছদ করেন না। এতো এতো বইয়ের কাজের চাপে তারা হয়তো চিন্তা করারও সময় পান না। একটা ভালো প্রচ্ছদ আঁকতে হলে তো বইটা পড়তে হবে, সময় দিতে হবে। এতো কিছুর মধ্যেও কিন্তু ভালো কাজ হচ্ছে। ধ্রুব এষ তো চমৎকার কাজ করছে! আরও অনেক নতুন নতুন আসছে, ভালো কাজ করছে।

মুজাহিদ বিল্লাহ : এবার ময়ূরপঙ্খির কথা জানতে চাই।  

ময়ূরপঙ্খি : আমরা প্রফেশনাল কাজ করার চেষ্টা করি। আমাদের হাউসে নিজস্ব এডিটর আছে। আর্ট ডিরেক্টর আছে। এটা ঠিক, অনেক হাউসে এডিটর নেই। এটা কিন্তু স্কিলের ব্যাপার। তাছাড়া আপনি একজন এডিটর রাখবেন তাকে তো বেতন দিতে হবে। সেই পরিমাণ বিক্রি আমাদের নেই। লোক পাওয়াটাও খুব কঠিন।

মুজাহিদ বিল্লাহ : এখন শিশুসাহিত্য যারা লিখছেন, তাদের পা-ুলিপি পড়তে গিয়ে নিশ্চয়ই অনেক অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রকাশক হিসেবে তাদের জন্য কি পরামর্শ দেবেন?

ময়ূরপঙ্খি : শিশুসাহিত্য অনেকেই মনে করেন খুব সহজ। আসলে খুব কঠিন একটা কাজ। শব্দ, বাক্য, বিষয় চিন্তা করে শিশুসাহিত্য লিখতে হয়। শিশুদের মানসিক বিকাশ চিন্তা করে তাদের গল্প লিখতে হয়। আমরা অনেক স্ক্রিপ্ট দেখতে পাই, লেখকরা শিক্ষণীয় কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন যাতে বাচ্চারা জানতে পারে, শিখতে পারে। এটা ভালো। কিন্তু সবাই যখন একই কাজ করে- তখন তো! আমরা চাই শিশুরা আনন্দের জন্য গল্পের বই পড়–ক। সব কিছুতে যদি জ্ঞান দিতে চাই তখন সেটা আর ভালো লাগে না। তাহলে স্কুলের বইয়ের মতো গল্পের বইয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যাবে। শিশুরা বিরক্ত হবে। আমরা মজার বই চাই। 

/তারা/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়