ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

‘মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরব না’

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২১ জুন ২০২৩   আপডেট: ২৩:০৫, ২১ জুন ২০২৩
‘মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরব না’

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করা। এ দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই শিক্ষকরা নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এদিকে বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্তি হবে এ বছরেই। পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দাবি আদায়ে শিক্ষকরা কী কর্মসূচি দেবেন, তাদের এজেন্ডা কী হবে, আন্দোলনের ধরন কেমন হবে নানা বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু বকর ইয়ামিন

রাইজিংবিডি: সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হলে ইতোমধ্যে যেগুলো জাতীয়করণ করা হয়েছে সেগুলোর কতটা মানোন্নয়ন হয়েছে সেগুলো দেখতে হবে। তার আলোকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বিষয়টিকে আপনার সংগঠন বিটিএ কীভাবে দেখছে?

শেখ কাওছার আহমেদ: মন্ত্রী মহোদয় এক্ষেত্রে তার যে যোগ্যতা সেটি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কারণ তিনি যেহেতু একটি মন্ত্রণালয় চালান সেহেতু তার কাছে সকল প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের তথ্য কেন থাকবে না? বিগত বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি রেজাল্ট হয়েছে সেটি মন্ত্রণালয়ের কাছে কেন থাকবে না? মন্ত্রী হিসেবে তার কাছে যদি তথ্য না থাকে তাহলে তিনি তো ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখেন না।

রাইজিংবিডি: আপনারা কি মনে করছেন এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ফল ভালো বা মানোন্নয়ন হয়েছে?

শেখ কাওছার আহমেদ: আমাদের কাছে যে তথ্য আছে সেটির আলোকে আমরা বলতে পারি, ইতোমধ্যে যে সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়েছে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ফল ভালো হয়েছে। সরকারিকরণ করা হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট খারাপ আছে এটি মন্ত্রী দেখাতে পারবেন না। এখনো জাতীয়করণ করার পরও কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি আদেশ জারি হয়নি। খোঁজ নিলে দেখা যাবে ওই উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করছে ওসব প্রতিষ্ঠানগুলো।

রাইজিংবিডি: আপনাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের সব কিছুর মূল দাবি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ। এক্ষেত্রে আপনারা দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন কি না?

শেখ কাওছার আহমেদ: আমরা একাধিকবার মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রেখেছি। আমাদের চিঠি দেয়া আছে, আবেদন করা আছে, আমাদের কোনো সংগঠনের কারো সাথেই মন্ত্রী মহোদয় দেখা করেনি। নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন তিনি আমাদের সাথে বসেছিলেন। ২০১০ সালের যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন আমাদের বিটিএ-এর তৎকালীন সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী সাহেব।

রাইজিংবিডি: জাতীয়করণের দাবি আদায়ে আপনাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হতে পারে?

শেখ কাওছার আহমেদ: আমরা অনেকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি আমরা, অনেকবার আবেদন জানিয়েছি, সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। গত ২০ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আমাদের সাথে বসেন নাই এবং তিনি আমাদের সাথে বসার প্রয়োজনও মনে করেন নাই। আমরা মনে করি এখন আমরা আর তার সঙ্গে আলোচনায় যাব না। আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রী ডাকতে বাধ্য হবেন এবং আমরা মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমাদের ডাকবেন।

রাইজিংবিডি: কবে নাগাদ আপনাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে এবং আন্দোলনের ধরন কেমন হবে? 

শেখ কাওছার আহমেদ: আগামী ১১ জুলাই থেকে আমরা সব শিক্ষকদের সমন্বয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আমাদের লাগাতার কর্মসূচি শুরু করব। সারাদেশ থেকেই শিক্ষকরা আমাদের এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যেই আমরা সেটি ঘোষণা করেছি।

রাইজিংবিডি: লাগাতার কর্মসূচি চলাকালে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে কি না?

শেখ কাওছার আহমেদ: লাগাতার কর্মসূচি চলাকালে আমাদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সারা দেশের প্রতি জেলা থেকে শিক্ষকরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

রাইজিংবিডি: আপনারা বিটিএর পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশে এই লাগাতার কর্মসূচি মাঝে মাঝেই ঘোষণা করেন। কিন্তু আপনাদের কর্মসূচি সকল প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে পালিত হয় না- এক্ষেত্রে সমস্যা কি দেখছেন?

শেখ কাওছার আহমেদ: কিছু জায়গায় জাতীয় কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয় না। তবে বেশিরভাগ জায়গায় কর্মসূচি পালিত হয়। আর যেসব জায়গায় কর্মসূচি পালন হয় না সেখানকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপের কারণে বা বিভিন্ন হুমকির কারণে আমাদের অনেক সময় শিক্ষকরা এ কর্মসূচি পালন করতে পারেন না। সরকারি দলের যে সমস্ত নেতৃবৃন্দ আছেন তারা মনে করেন আমাদের এ কর্মসূচি সরকারবিরোধী। ফলে তারা এর বিরোধিতা করেন। আসলে আমাদের কর্মসূচি সরকারবিরোধী নয়। এটা আমাদের শিক্ষকদের একান্তই দাবি, এটি আমাদের অধিকার।

রাইজিংবিডি: আপনাদের শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন আছে। শিক্ষকরা কি বিভিন্ন দলে বিভক্ত? এমনটা কেন?

শেখ কাওছার আহমেদ: সারা বাংলাদেশে শুরু থেকে একটাই সংগঠন ছিল বিটিএ। তারপর সেখানে ব্যক্তিগত মত-দ্বিমতের ফলে কিছু সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। তবে, আসলে মূল এখনো বিটিএ-ই আছে।

রাইজিংবিডি: বিভিন্ন সংগঠনের দ্বিধা বিভক্তি আপনাদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করেন কি?

শেখ কাওছার আহমেদ: না। আমরা একেবারেই মনে করছি না যে আমাদের সংগঠনের দ্বিধা বিভক্তির কারণে আমাদের দাবি আদায়ে বাধা সৃষ্টি হবে। যে শিক্ষক তার মত-দ্বিমতের কারণে যে সংগঠনই করেন না কেন আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষকের একটাই দাবি- সেটা জাতীয়করণ। এর দাবিতে আমরা সকল শিক্ষকরা সম্পূর্ণ একমত। এখানে কারো কোনো দ্বিধা বিভক্তি নেই। আশা করছি, সরকার আমাদের দাবি মেনে নিতে আন্তরিক হবে এবং অচিরেই জাতীয়করণের ঘোষণা দেবে। এটা এখন সময়ের দাবি। এই দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরবো না।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়