ঢাকা     সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩১

‘সন্ধ্যায় রেমালের অতিক্রম শুরু, এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে যান’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ২৬ মে ২০২৪  
‘সন্ধ্যায় রেমালের অতিক্রম শুরু, এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে যান’

‘ধে‌য়ে আস‌ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ইতোম‌ধ্যে মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়ের প্রথমভাগ বাংলাদেশ অতিক্রম শুরু করবে।  আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত র‌য়ে‌ছে। শেষবা‌রের মত অনু‌রোধ কর‌ছি, আপনারা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চ‌লে যান’।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান রোববার (২৬ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ অনুরোধ জানান।

প্রতিমন্ত্রী জানান, মধ্যরাতের মধ্যে ঝড়ের মূল অংশটি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। উপকূল অতিক্রমের সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। ঝড়ের সময় উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। জোয়ার থাকলে এটি আরও বেশি হবে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে।

‘আমি সবাইকে শেষবারের মতো আহ্বান জানাবো- কালবিলম্ব না করে যেসব এলাকা অ্যাফেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে, সবাই এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে যান’ ব‌লেন প্রতিমন্ত্রী।

তি‌নি বলেন, আমরা পেছনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আরও সক্ষমতার সঙ্গে রেমাল মোকাবিলার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমরা যে নির্দেশনা দিচ্ছি, সেটা যদি সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেন, আশা করছি এই দুর্যোগও আমরা পূর্বের মতো সক্ষমতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবো।

‘আমরা গতকাল বলেছিলাম আজ ভোর থেকেই দুর্যোগ শুরু হতে পারে। ঝড়ের গতিটা কম বলে এটি আজ ভোরে আসেনি। গতকাল এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার কিন্তু ভোররাতে এটির গতি কমে ১০ এর নিচে ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটারে নেমে এসেছে’ জানান প্রতিমন্ত্রী।

তি‌নি ব‌লেন, ঝড়ের কারণে দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ঝড় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা মনে করছি বৃষ্টিপাতের জন্য সারাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে ভূমিধস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটায় ঝড়ের কারণে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও জানান তিনি।

আট লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জা‌নি‌য়ে ম‌হিবুর রহমান ব‌লেন, আমরা ইতোমধ্যে আট থেকে নয় হাজার আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে রেখেছি। উপকূলীয় এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বলা হয়েছে তারা যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি থেকে মানুষকে আশ্রয়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারে।

সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার বিস্কুট, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে গেছে ব‌লেও জানান তি‌নি।

মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সর্বাত্মকভাবে কাজ হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি আঘাত হানার আগে আমরা সকল মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আসতে পারবো। ঝড় পরবর্তী সময়ে কাজ করার জন্য আমাদের মেডিক্যাল টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানেও আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর লোক যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে তৈরি হয়ে আছে। ঝড়ের পর যেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে অন্য এলাকার কর্মকর্তারা কাজ করতে পারেন সেজন্য টিম গঠনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই আমরা প্রস্তুত রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি কার্যক্রম করছেন জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। ‌তার নেতৃত্ব এবং পরামর্শে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।

তিনি বলেন, শহর-গ্রাম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যানজট হতে পারে, স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লঞ্চ-স্টিমার যেগুলো চলাচল করছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

‘খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় ১৬ জেলা র‌য়ে‌ছে’ ব‌লেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

নঈমুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়