সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত
মুজতাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম
![সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024February/BashKhali-Seabeach-1-2402150708.jpg)
নগর জীবনের ব্যস্ততার মাঝে মন চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে। তাই তো আপনার একঘেয়েমি ও ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত। যার উত্তরে শঙ্খ নদী, দক্ষিণে চকরিয়া-পেকুয়া, পূর্বে পাহাড় এবং পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গোপসাগর সীমারেখায় অবস্থিত।
এই সমুদ্র সৈকত তার মনোরম পরিবেশ, মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে এই বিশাল বালুতটের অপরূপ সৌন্দর্য, নির্জন পরিবেশ এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম বিভাগের বাঁশখালী উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও পরিচিত। এটি একটি বালুকাময় সৈকত। এর দুটি প্রধান পয়েন্ট রয়েছে। একটি কদমরসুল এবং অন্যটি খানখানাবাদ। সৈকতের দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সৈকত এটি।
চট্টগ্রাম শহর থেকে এই সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এই সৈকতটি বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, গণ্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। সমুদ্র সৈকতের পুরো পশ্চিম দিকটি কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং কুতুবদিয়া দ্বীপটিও এর কাছাকাছি। বাঁশখালীর গুনাগরী বাজার থেকে সরাসরি এই সৈকতে পৌঁছানো যায়। ৪৫০ বছরের পুরনো বকশী হামিদ মসজিদটিও এই সমুদ্র থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দেবে আপনার। দেখা পাবেন নানা বয়সী মানুষ কতই না আনন্দ করছে সেখানে। সৈকতের সোনালী বালি, নীল সমুদ্রের অবিশ্রান্ত তরঙ্গ, দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ, সারিবদ্ধ ঝাউবন- সবমিলিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য এই সৈকতকে করে তোলে আরও মনোমুগ্ধকর।
বাঁশখালির এ সৈকতটি প্রায়ই মূখর থাকে গাঙচিলের আনাগোনায়। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঝাউবন হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রকৃতিপ্রেমীদের। তাদের অনেকে জানান, বসার সিট থাকলে আরও সুন্দর লাগতো। কেউ কেউ আবার সিকিউরিটি বাড়ানোর কথাও বললেন।
মূলত স্থানীয়রাই এই সৈকতে বেড়াতে যায়। খুব একটা পা পড়ে না দূরের লোকজনের। কেননা, মূল সড়ক থেকে কয়েকটি পথে সেখানে যাবার সুযোগ থাকলেও এখনো অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা। স্থানীয়রা জানান, অনেক পর্যটক আসতো রাস্তাঘাট যদি আর একটু ভালো থাকতো।
স্থানীয়দের আক্ষেপ, সঠিক প্রচার প্রচারণার অভাবে সৈকতটি কিছুটা দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিলে এটিও কক্সবাজারের মতো পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলে মনে করছেন আগত পর্যটকরা।
স্থানীয়রা জানান, জাতীয় দিবস, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত হাজারো লোকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। এ সৈকতের ৭ পয়েন্টে দেখা মেলে হাজার হাজার পর্যটকের। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এবং ভালো মানের আবাসিক হোটেল না থাকায় পর্যটকরা দ্রুতই সৈকত ত্যাগ করে উপজেলা সদর কিংবা নিজ বাসস্থানে চলে যান। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সরকার যেমন লাভবান হবে, তেমনি বিনোদনপ্রেমী পর্যটকেরা ভ্রমণের জন্য খুঁজে পাবে নতুন ঠিকানা।
এখানে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সন্ধ্যার পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য যেকোনো মানুষের মনকে অনেক বেশি পুলকিত করে। সুতরাং সৈকতে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারেন।
সাগরের গর্জন মন ভালো করে দেয়। এর আদিগন্ত জলরাশি দেখে বারবার বিমোহিত হই ভ্রমণ পিপাসুরা। এজন্য সবার সমুদ্র দর্শনে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের ঘনঘন মন খারাপ স্বভাব আছে তাদের। একা একা সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, আর নিজের সব দুঃখ, কষ্ট সমুদ্রের সঙ্গে শেয়ার করবেন। দেখবেন, মন হালকা হয়ে যাবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
/মেহেদী/
আরো পড়ুন