ঢাকা     মঙ্গলবার   ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ২৮ ১৪৩১

দেশে চকলেটের কাঁচামাল ‘কোকোয়া’ চাষের বিপুল সম্ভাবনা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২৩:১৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
দেশে চকলেটের কাঁচামাল ‘কোকোয়া’ চাষের বিপুল সম্ভাবনা

গাছে ধরে আছে কোকোয়া ফল

দেশে চকলেট তৈরির কাঁচামার ‘কোকোয়া’ ফর চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এরইমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সরকারিভাবে এটি চাষে সুফল এসেছে। কৃষকরা এটি চাষ করলে সফলতা পাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনে এই ফলের গাছ আফ্রিকা জুড়ে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। বিশ্ব জুড়ে রপ্তানির শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকা। এসিডিক বা অম্লীয় মাটি এই চাষের জন্য উপযোগী। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ লাল মাটিযুক্ত অঞ্চলে এটির ভালো ফলনের সম্ভাবনা আছে।

২০১৪ সালে ভিয়েতনাম থেকে গবেষণার জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু ‘কোকোয়া’ চারা আনা হয়। বর্তমানে পরিণত হয়ে ফল দিচ্ছে। পরিপক্ব ফল তুলে একদিকে যেমন খাওয়া যাচ্ছে, আবার প্রক্রিয়া করে তৈরি করা হচ্ছে চারাগাছও।

সম্প্রতি ঢাকার সাভারের হর্টিকালচার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ‘কোকোয়া’ ফলের দুটি গাছ সেখানে বেড়ে উঠেছে। দুটি গাছই পরিণত। ঝোপালো ধরনের ৭-৮ মিটার উচ্চতার গাছ দুটিতে ধরে আছে ফুল থেকে শুরু করে পরিপক্ক অসংখ্য ফল।

হর্টিকালচার সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এই ফলের চারা এনে রোপণ করা হয়। সাভারে দুটি গাছ রয়েছে। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে গাছে ফুল ও ফল ধরছে।

হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোকোয়া ফলের ভেতরে থাকা বীজ থেকে এটির চারা উৎপাদন করা যায়। এছাড়া কলমের মাধ্যমেও চারা উৎপাদন করা যায়। চারা রোপনের ৫-৬ বছর পর থেকে ফল ধরা শুরু করে। বছরে ৩-৪ বার ফলন হয়। ফলে সারা বছরই কমবেশি ফল পাওয়া যায়। এ ফলের গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না বললেই চলে। দেশিয় ছাত্রাপোকা (মিলিবাগ) হলেও সেটি আপনা-আপনি প্রতিরোধ করে ফেলে।’

তিনি বলেন, ‘ফুল থেকে ফল হয়ে সেটি পাকতে সময় লাগে ৩-৪ মাস। পাকার পর কোনোটা ধূসর কোনোটা হলুদ রং ধারণ করে। ভেতরে ফল থাকে। খোসা ছাড়িয়ে ফল বের করতে হয়। পাকা ফল খাওয়া যায়। স্বাদ টকমিষ্টি। আবার ফল বের করে সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে চকলেটের পাউডার তৈরির জন্য প্রস্তুত করা যায়।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফলের রং বাদামি, ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ সেন্টিমিটার পুরু, বাইরের আবরণ চামড়ার মতো শক্ত। প্রতিটি ফলে ২০-৪০টিরও বেশি বীজ থাকে। বীজগুলো প্রথমে কলাপাতায় মুড়িয়ে গাঁজানো হয়। পরে রোদে শুকিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ালেই পরিষ্কার একটি শাঁস পাওয়া যায়। এই শাঁসকে বলা হয় কোকোবিন। কোকোবিনের গুঁড়োই চকলেট পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। উৎকৃষ্ট মানের চকলেট, মাখন, আইসক্রিম, রুটি, পুডিং, প্রসাধনসামগ্রী ও পানীয় তৈরিতে কোকো ফল ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ণবয়স্ক একটি ‘কোকোয়া’ গাছ থেকে ৩৫ কেজি ফল পাওয়া যায়। প্রক্রিয়াজাত করলে সেখান থেকে ৩০ কেজি চকলেট পাউডার পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি চকলেট পাউডারের দাম বর্তমানে প্রায় ৪০ ডলার। ওই হিসেবে একটি গাছ থেকে বছরে এক হাজার ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।’

সাভারে এটি চাষ সম্ভব কীভাবে হলো এমন প্রশ্নে দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘চারা বেড়ে ওঠার জন্য এসিডিক বা অম্লীয় মাটির প্রয়োজন হয়। সাভারের যে লাল মাটি সেটি এই গাছের চারা বেড়ে ওঠার উপযোগী। আমাদের এখানে গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। এখন ফল দিচ্ছে। একইভাবে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের মাটিও উপযোগী। ছাদ বাগানেও কোকো ফল চাষ করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অন্তত ৫-৭ লাখ হেক্টর অনাবাদী জমি রয়েছে। যেখানে এই গাছ চাষের উপযোগী মাটি রয়েছে। ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং কে সমৃদ্ধ এই ফলের চকলেট পাউডার শতভাগ বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে আনতে হয়। দেশে এটির উৎপাদন বাড়লে আয়ের বড় পথ উন্মোচন হতে পারে।’

এই ফলের চাষ বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগ রয়েছে কি-না প্রশ্নে দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমরা চারা উৎপাদন করছি। সেগুলো নামমাত্র মূল্যে ও বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। অনেকেই এটি চাষ করছেন। উৎসাহিত হচ্ছেন চাষে। এটির আরও প্রসারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়া রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই আন্তরিক।

সাব্বির/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়