ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চরাঞ্চলে কৃষকদের বাঙ্গি চাষে বিপ্লব

এইচ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ১১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:০০, ১১ এপ্রিল ২০২১
চরাঞ্চলে কৃষকদের বাঙ্গি চাষে বিপ্লব

রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নে বাঙ্গি চাষ

নরসিংদীর চরাঞ্চলে মৌসুমি ফল বাঙ্গি চাষ করে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অতি গরমে অতিষ্ঠ প্রাণ খোঁজে একটু স্বস্তি, সেই সময় একটু রসালো বাঙ্গি প্রাণে এনে দেয় প্রশান্তি। দূর করে শরীরের কান্তি। গ্রীষ্মের ফলগুলোর মধ্যে এ বাঙ্গি অন্যতম, যা জেলার রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকের মাঠে শোভা পাচ্ছে।

অল্প শ্রম ও কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই বাঙ্গি চাষে ঝুঁকছেন ওই অঞ্চলের কৃষকরা। তাছাড়া বাঙ্গি বিক্রি করতেও কৃষকের তেমন একটা চিন্তা করতে হয় না। ক্ষেতেই পাইকারি ক্রেতারা এসে শতক দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার রায়পুরা উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের মধ্যে চরাঞ্চলই আটটি ইউনিয়ন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গি চাষাবাদ হয়, পাড়াতলী, চানপুর, বাঁশগাড়ি, শ্রীনগর, নিলক্ষা, চরমধূয়া ও মির্জাচর ইউনিয়নে। ওই এলাকাগুলোর বেলে-দোআঁশ মাটি অনেক উর্বর। এতে কৃষকদের ফলনও অনেক ভালো হয়।  চলতি মৌসুমে এ চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে মোট ৪০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর হয়েছিল ৩৬ হেক্টর জমিতে। সে অনুযায়ী এবার ৪ হেক্টর জমিতে বেশি বাঙ্গি চাষ হয়েছে। এ বছর বাঙ্গি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন।  

কৃষকরা জানায়, পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগর ও বাশঁগাড়ীর চান্দেরকান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাঙ্গি চাষ করেন। শুধু মধ্যনগর বা চান্দেরকান্দি নয়, বর্তমানে আশেপাশের বেশ কয়েকটি চরে বাঙ্গির আবাদ হচ্ছে। এসব চরের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রঙ উজ্বল হয়। তাই এ অঞ্চলের বাঙ্গি দেখতে সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে বাঙ্গি ফল হিসাবে খাওয়া ছাড়াও কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসাবে রান্না করে খাওয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বাঁশগাড়ী ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল চর। বিস্তৃর্ণ এ চরের ধান, আলু, বাদামসহ বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। দুই পক্ষের দর কষাকষিতে চলছে বেচাকেনা।

পরে শ্রমিকরা বাঙ্গির জমি থেকে নৌকা ঘাটের প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে ঝুড়িতে (চাং) করে মাথায় নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নৌকায় ভর্তি করছেন। এতে পুরো চরে দেখা গেছে পাইকার, কৃষক ও শ্রমিকের ব্যাপক কর্মচঞ্চলতা।

বাঁশগাড়ী এলাকার বাঙ্গি চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বাঙ্গি চাষ করতে তেমন একটা বেশি খরচ ও পরিশ্রম লাগে না। প্রথমে জমিতে বীজ বপন করতে হয়। পরে যখন চারা গজায়, তখন সার দিয়ে একটা নিরানী দিতে হয়। চারা যখন একটু বড় হয়ে ওঠে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ওষুধ ছিটিয়ে দিতে হয়। এর পরই বাঙ্গি গাছ আস্তে আস্তে মাটির মধ্যে ছড়াতে থাকে। এ বছর আমি এক বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করতে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি যদি শিলাবৃষ্টি না হয়, সব মিলাইয়া ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো।’

একই এলাকার কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, ‘আগে নিজেরা খাওনের জন্য অল্প জমিতে বাঙ্গি করতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধইরা বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা চর থাইক্যা বাঙ্গি কিনা শুরু করেছে। গৃহস্থরা ভালা লাভ পাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে বাঙ্গির চাষ করতে থাকে। এখনতো চরের অর্ধেক জমিতেই বাঙ্গি চাষ হয়।’

বাঙ্গির পাইকারি ক্রেতা নবীনগর উপজেলার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ চরের চাষিদের কাছ থেকে পাইকারি বাঙ্গি কিনেছি। বাঙ্গি বিক্রি হয় শতক হিসেবে। আকার ভেদে প্রতি শত বাঙ্গি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। এ অঞ্চলে বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু। তাই ক্রেতাদের অনেক পছন্দ।’

ঝুড়িতে (স্থানীয় ভাষায় চাং) বাঙ্গি ভরে নৌকায় নেওয়া শ্রমিক মধ্যনগর গ্রামের আলী হোসেন বলেন, ‘বাঙ্গির পুরা মৌসুমে এই গ্রামের কেউ বইস্যা থাহে না। সবাই কিছু না কিছু করে। জমি থাইক্যা একটা বাঙ্গির ঝুড়ি (চাং) নৌকা ঘাটে নিলে ২০ টাকা পাই। এতে প্রতিদিন আমরা ৫ থেকে ৬ শত টাকা মজুরি পাই।’

রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান বলেন, ‘রায়পুরার চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে কৃষকরা নিজেদেরই উৎপাদিত বীজই ব্যবহার করছেন। তবে বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ভালো বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের।’

নরসিংদী/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়