ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শীত এলে চাহিদা বাড়ে ডালের বড়ির

সিদ্দিক আলম দয়াল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৬ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১০:৫৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
শীত এলে চাহিদা বাড়ে ডালের বড়ির

শীতের অন্যতম অনুসঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম ডালের বড়ি। বছরজুড়ে এর চাহিদা থাকলেও শীতে বাজারে বড়ির চাহিদা আরো বেড়ে যায়। ব্যাপক চাহিদা ও লাভ থাকায় তাই শীতের শুরু থেকেই মাসকলাই ডালের বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় গাইবান্ধার কয়েকটি গ্রামের ৫০০ পরিবারের নারী ও পুরুষকে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ডালের বড়ি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। 
 
তবে বড়ি তৈরীর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন লাভবান হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন এ পেশায় জড়িতরা।  

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খামার বোয়ালী, লক্ষীপুর, দাড়িয়াপুর, নতুনবন্দর বাজার, সাঘাটা উপজেলার উজিরের বাইগুনি, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, তারাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক শ পরিবার মাসকলাই ডালের বড়ি তৈরী করেন। 

কাকডাকা ভোর থেকেই বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এসব গ্রামের লোকজন। রাতে মাসকলাইয়ের ডাল যাতায় পিশে তা ভিজিয়ে রাখতে হয়। সকালে তা ফেটিয়ে ছোট ও বড় আকারের বড়ি বানিয়ে বাঁশের চালা কিংবা কাপড়ের ফ্রেমে আটকিয়ে দিতে হয়। তারপর দু’একদিন রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। ডালের বড়ি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্চন সাহা দীর্ঘদিন ধরে ডালের বড়ি তৈরী করেন। তার পূর্ববর্তীরাও এই পেশায় ছিলেন। দুই ছেলে তিন মেয়ে পড়ালেখা করেন। পাশাপাশি তারা বড়ি তৈরিতে পরিবারকে সাহায্য করেন। সারা বছর বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও শীত এলে তাদের হাতে সময় থাকেনা। 

ওই গ্রামের অরেক বাসিন্দা দেবাশীষ দাস। তিনিও দীর্ঘদিন এই পেশায় জড়িত। সারা বছর চেনা ক্রেতারা তার কাছে থেকে বড়ি কেনেন। সে কারণে শীত ছাড়াও সারা বছর তিনি একটু ভালো মানের বড়ি তৈরী ও বিক্রি করেন। দিনে ৮/১০ কেজি বড়ি বিক্রি করেন তিনি। মান ভালো বলে তার বড়ি নাকি সারাদেশে এমনকি আত্বীয় স্বজনদের মাধ্যমে বিদেশেও যায়।  

তিনি জানান, ১০ কেজি মাসকলাই ডাল কিনতে গুণতে হয় ৬০০ টাকা। এ দিয়ে বড়ি তৈরি হয় ৮ কেজি। শুকনো বড়ি পাইকারিভাবে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ আসে। নিজেদের বাড়ি থেকে খুচরা ও পাইকারি অথবা হাটে বাজারেও এ বড়ি বিক্রি করা হয়।  

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খামার বোয়ালী গ্রামের শিবু চন্দ্র জানান, আগে মাসকলাই ডালের দাম কম ছিল। তখন বড়ি তৈরী করে লাভ আসতো। কিন্তু এখন তা হয়না। বড়ি বিক্রি করে পেটে ভাতে চলে যায়। তাছাড়া সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে হয়তো ব্যবসাটা আরো বাড়ানো যেতো। সব কিছুর দাম এখন বেশি ফলে কুলিয়ে উঠতে পারিনা।গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম সাবু জানান, কয়েকটি গ্রামে বড়ি তৈরী হয়। শীতের আগে থেকে অনেকেই ডাল কিনে বড়ি তৈরী করে শুকিয়ে রোদে দিয়ে ঘরে মজুত করেন। শীত এলে হাটে বাজারে বিক্রি করেন। তাছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার এসে বড়ি কিনে নিয়ে যায়। সে কারণে আগে থেকেই বড়ি তৈরী করে ঘরে রাখেন তারা। 

বিসিক গাইবান্ধার সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় জানান, গাইবান্ধার ডালের বড়ি ভালো মানের হয়। ক্রেতাও অনেক। আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হলে বিসিক তাদের পাশে থাকবে এবং সহযোগিতা করবে।

গাইবান্ধা/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়