রাজধানীতে কিশোরগঞ্জবাসীর বিনামূল্যের মেহমানখানা
![রাজধানীতে কিশোরগঞ্জবাসীর বিনামূল্যের মেহমানখানা রাজধানীতে কিশোরগঞ্জবাসীর বিনামূল্যের মেহমানখানা](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022July/risingbd2-2207271037.jpg)
জাদুর শহর ঢাকা! এই শহরে মানুষ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ছুটে চলে ভাগ্য বদলের জন্য। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে বিভিন্ন প্রয়োজনে। এ সময় যাদের এই শহরে কোনো পরিচিতজন নেই তাদের রাত্রীযাপনের জন্য বেছে নিতে হয় হোটেল, গুনতে হয় টাকা।
কিন্তু এমন যদি হয়- ঢাকায় বিনামূল্যে রাতে থাকার ব্যবস্থা করেছেন কেউ! পড়ে অবাক লাগছে? অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষের জন্য এমন এক ব্যবস্থা করেছেন ‘সুখী কিশোরগঞ্জ’-এর উদ্যোক্তারা।
ঢাকার গ্রীন রোডে সুখী কিশোরগঞ্জ গড়ে তুলেছে বিনামূল্যের মেহমানখানা। এখানে ৪টি কক্ষে প্রায় ২০ জনের থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। চাকরি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য, অথবা চিকিৎসা বা যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে এখানে রাতে থাকা যাবে। মহিলাদের থাকার জন্যও রয়েছে আলাদা জায়গা। রয়েছে রান্নার সুবিধা; চাইলে অতিথিরা রান্না করে খেতে পারবেন।
এই মেহমানখানায় থাকার জন্য আগে ব্যবস্থাপক তানভীর রহমানকে মুঠোফোনে জানাতে হয়। তিনি নিশ্চিত করলেই মিলবে সুযোগ। এ জন্য কিশোরগঞ্জবাসীকে দিতে হয় কয়েকটি তথ্য। নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ঢাকায় আসা এবং ফিরে যাওয়ার তারিখ, সঙ্গে কে থাকবেন, তাদের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, ঢাকায় আসার কারণ, রেফারেন্স ইত্যাদি। এ ছাড়াও সংযুক্তি হিসেবে রোগীর ক্ষেত্রে আগের প্রেসক্রিপশনের ছবি, চাকরির ইন্টারভিউ হলে ইন্টারভিউ কার্ডের ছবি, মহিলা অতিথির ক্ষেত্রে বাবা, ভাই, স্বামী অথবা সন্তান সঙ্গে থাকতে হবে।
এমন এক উদ্যোগের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন সুখী কিশোরগঞ্জের উদ্যোক্তারা। রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা হয় এর উদ্যোক্তা মো. লুৎফুল্লাহ হুসাইন পাভেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবরে শুরু হয় মেহমানখানার যাত্রা। যদিও প্রস্তুতি চলছিল আরো আগে থেকে। আমরা চাই মানুষ একে অপরের কল্যাণে এগিয়ে আসুক। একটা সিস্টেম চালু হোক।
বাড়ি ভাড়া বাদে মেহমানখানায় প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। এই অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে পাভেল বলেন, আগামী ৬ মাস মেহমানখানার খরচ চালানোর জন্য অর্থ চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। একদিনেই ২৫ জন অর্থদাতা অর্থ দিয়েছেন। সচ্ছতা নিশ্চিত করতে তাদের নামসহ তথ্য দেওয়া হয় গ্রুপে। কেউ নাম প্রকাশ করতে না চাইলে দেওয়া হয় ফোন নাম্বারের কয়েকটি ডিজিট।
সুখী কিশোরগঞ্জ নামকরণ প্রসঙ্গে এই উদ্যোক্তা বলেন, লেখক হুমায়ূন আহমেদের এক নাটকে ‘সুখী নীলগঞ্জ’ নামে একটি প্রজেক্ট দেখানো হয়েছিল। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই এ নামকরণ।
মানুষের উপকার করলে পরম তৃপ্তি পাওয়া যায়। অনেকেই আমাদের কাজের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। আমরা চাই সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অন্যকে সুখী করার কাজ করুক। ফেইসবুকে পোস্ট দিলে ভালো কাজের জন্য সাহায্য পাওয়া যায় দ্রুত। আমরা চাইলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। বলেন পাভেল।
চাকরির জন্য ঢাকায় এসে মেহমানখানায় উঠেছেন কয়েকজন তরুণ। তাদেরই একজন রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে আমরা এখানে এসেছি। কেউ কাউকে চিনি না। একবারও মনে হয়নি আমরা অপরিচিত। সবাই আমরা কিশোরগইঞ্জা- এই পরিচয়ে আপন হয়ে উঠতে দেরী হয়নি আমাদের। ঢাকার বুকে এমন একটি আপন ঠিকানা না থাকলে এর মর্ম বোঝা যাবে না।
অনেক অতিথি যাওয়ার আগে তাদের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন। তাদের মন্তব্য অনুপ্রেরণা যোগায় উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের। সেলিম মিয়া নামে একজন লিখেছেন, ‘চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসি। রাতে থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ মেহমানখানায় মেহমান হিসাবে থাকার পর মনে হয়েছে নিজের বাড়িতে আছি।’
এমন অজস্র মন্তব্য রয়েছে খাতায়। আসাদুজ্জামান মঞ্জিল লিখেছেন, ‘ডা. দেখাতে ল্যাবএইড হাসপাতালে এসেছিলাম। পাশাপাশি গ্রিনরোডে সুখী কিশোরগঞ্জ। এখানে তানভীর ভাই এবং তার সহকর্মীদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এ রকম সুন্দর, মনোমুগ্ধকর ব্যবস্থাপনার জন্য।’
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তানভীর রহমান। তিনি বলেন, মেহমানখানা থেকে বিদায় নেওয়ার আগে মেহমানগণ মন্তব্য খাতায় নিজেদের অনুভূতি লিখে যান। সেগুলো পড়লে মন আনন্দে ভরে যায় এবং আমরা এই সেবামূলক কাজ করতে বেশি বেশি আগ্রহ পাই।
/তারা/
আরো পড়ুন