ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

সবুজ মাল্টায় চাষিদের চোখে রঙিন স্বপ্ন

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ৬ অক্টোবর ২০২২  
সবুজ মাল্টায় চাষিদের চোখে রঙিন স্বপ্ন

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় সবুজ মাল্টা চাষে ব্যাপক ফলন হওয়ায় চাষিদের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। এতে আর্থিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন মাল্টা চাষিরা। সবুজ রঙের এই মাল্টা স্থানীয় বাজারসহ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, মাল্টা চাষে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে সব ধরণের সহযোগিতা।

স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১৩ একর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। তাতে ফলন হয়েছে ৮০ মেট্রিকটন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মধ্যে মাল্টার চারা, প্রয়োজনীয় সার, গভীর নলকূপ, পরিচর্যা সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই বিগত বছরের তুলনায় এবার মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের শুরুর দিকে মাল্টা পরিপক্ক হয়। এই সময়ে ফল সংগ্রহে চাষিদের ধুম পড়ে। তাছাড়া বাজারে মাল্টার দাম ও চাহিদা দুটো ভালো।

কৃষি অধিদপ্তর আরও জানায়, উপজেলার বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া, মোক্তারপুর ও নাগরী ইউনিয়নের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। প্রতি হেক্টর জমিতে সোয়া ৬ টন মাল্টা উৎপাদন হয়। একবার মাল্টা বাগান করলে ২০ বছর পর্যন্ত টানা ফল পাওয়া যায়। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।

আরো পড়ুন:

উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের পৈলানপুর গ্রামের মৃত কাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে মাল্টা চাষি কাজী মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সুজন (৪৫) জানান, গেল বছর তিনি ২০ শতক জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর তার মাল্টা বাগানে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারের মাল্টারও বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।

একই উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের কাউলিতা গ্রামের শাহজাহান এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. শাখাওয়াৎ হোসেন খান শরীফ (৪৭) জানান, ১ একর জমিতে মাল্টার চাষ করে তিনি গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন পেয়েছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে মাল্টার আরও ভালো ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি। তবে তার এগ্রো ফার্মে স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় নানা ব্যাপারে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেন বলেন জানান তিনি।

মোক্তারপুর ইউনিয়নের বিডি বাঘুন গ্রামের আরেক মাল্টা চাষি মো. জামির হোসেন (৫৫) জানান, তিনি ৭ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগানের সঙ্গে অন্য ফলের চাষও করছেন। গত বছর এ মাল্টা বাগানে খুব বেশি ফলন না পেলেও এ বছর মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়ভাবে মাল্টা বাগানের খুব চাহিদা থাকায় মাঠ পর্যায়ের কৃষকদেরকে মাল্টা চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাল্টা চারা, সারসহ অন্যান্য উপাদান সরবরাহ করা হয়। এতে করে কৃষকদের মাঝে মাল্টা চাষে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আর মাল্টা চাষ করে তারা ফলন পাচ্ছে ভাল। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে আরো ভাল ফল পাবে বলেও তিনি আশা করেন।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, উপজেলায় এবার মাল্টা চাষ ব্যাপকভাবে হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলনও হয়েছে ব্যাপকভাবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মাল্টার ফলন দ্বিগুণ হতে পারে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রত্যেক চাষিকে বাগানে বাগানে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই অনুযায়ী বাগানের পরিচর্যাও হচ্ছে। বাগানের রোগ ব্যবস্থাপনা, পোকা ব্যবস্থাপনা এবং নিয়মিত সার পরিচর্যার কারণে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবে বলে তিনি আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদদ ফারজানা তাসলিম বলেন, মাল্টা বিদেশি ফল হলেও বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কিছু নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যা দেশের মাটিতেও ভালো ফলন দিচ্ছে এবং খুব সহজেই তা চাষাবাদ করতে পারছে।

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়