সিরাজগঞ্জে আধুনিক আলু সংরক্ষণাগার, কৃষকের মুখে হাসি
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
![সিরাজগঞ্জে আধুনিক আলু সংরক্ষণাগার, কৃষকের মুখে হাসি সিরাজগঞ্জে আধুনিক আলু সংরক্ষণাগার, কৃষকের মুখে হাসি](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024March/Untitled-1-copy-2403041145.jpg)
আলু সংরক্ষণের জন্য সাধারণত হিমাগার ব্যবহার করে থাকেন চাষিরা। তবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দেশীয় পদ্ধতিতে আধুনিক আলু সংরক্ষণার তৈরি করেছে কৃষি বিভাগ।
এই আধুনিক আলু সংরক্ষণাগারটি উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের বাড়িতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে স্থাপন করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু চাষাবাদ হয় উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর, ভাটবেড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আলু তোলার পর তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার সুবিধা না থাকায় বাধ্য হয়ে অল্প দামে বিক্রি করে দেন কৃষকরা। অনেক কৃষকের আলু পঁচে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন। ফলে এখানকার উর্বর জমিতে আলুর বাম্পার ফলনেও কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হতে পারেন না। কৃষকদের সমস্যার কথা চিন্তা করে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বাঁশ, কাঠ, লোহার ফ্রেমে তৈরি করা হয়েছে এই আধুনিক আলু সংরক্ষণাগারটি। চারদিকে বাঁশের চাটাই দিয়ে দেওয়া হয়েছে বেড়া। বাহির থেকে দেখলে কারো বোঝার উপায় নেই এটি একটি সংরক্ষণাগার। যার ভিতর কাঠের তৈরি একাধিক তাকে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬ টন আলু। কোন প্রকার খরচ ছাড়াই কৃষকরা সহজেই এখানে প্রায় ৪ মাস সময় আলু রাখতে পারবে। ফলে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে। আলুর গুণগত মান ঠিকই থাকবে।
আধুনিক আলু সংরক্ষণাগারটি তৈরি হয়েছে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ঘরের পাকা মেঝে, চারদিকে বাঁশের চাটায়ের বেড়া। লোহার স্টিলের ফ্রেমের উপর টিনের ছাউনিতে চারদিকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিতরে একটি সাধারণ বাল্ব আর ফ্যান ছাড়া কিছুই নেই। ঘরের ভিতর কাঠের তৈরি তাকে ২৪টি তাক তৈরি করা হয়েছে। যার একেকটির ভিতর ১০ মণ করে আলু সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি তাকের উপর আলু রাখা কৃষকের নাম পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। এভাবে আলু তোলার পর থেকে চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়। পরবর্তীতে সুবিধা মতো সময়ে কৃষকরা তা বাড়তি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এখানে আলু রাখলে তা নষ্ট হয় না। শুধু আলু নয়। কন্দাল জাতীয় ফসল যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণ করে বছর জুড়ে রেখে কৃষকরা বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। ইতোমধ্যে ব্যতিক্রমী এই আলু সংরক্ষণাগার ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় উপজেলা জুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেক এলাকার কৃষক এটি দেখতে আসছেন। তারাও ব্যক্তি উদ্যোগে এমন সংরক্ষণাগার তৈরির আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
মাহমুদপুর গ্রামের আলু চাষি শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল বারী জানান, কৃষকদের সমস্যার সমাধানের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ গত বছর ৩০ জন কৃষককে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পে আলু চাষাবাদ, সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। আলু চাষীদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি প্রাকৃতিক আলু সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে।
ভাটবেড়া গ্রামের কৃষক মোতালেব আকন্দ, আবেদ আলী, কুদ্দুস শেখ ও আফজাল হোসেন জানান, এই আলু সংরক্ষণাগারটি আমাদের উপকারে এসেছে। আলু তোলার পর আমরা ঘরে রাখতে পারতাম না; পচে যেত। অল্প দামে বিক্রি করতাম। এখন নিজের বাড়ির সংরক্ষণাগারে নিশ্চিন্তে আলু রেখে বাজার দেখে বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি। এ ধরনের সংরক্ষণাগার প্রতিটি এলাকায় দিলে কৃষকদের সমস্যা দূর হবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, মৌসুমের সময় আলুসহ কন্দাল জাতীয় ফসলের দাম কম থাকে। সংরক্ষণের অভাবে পচে যায়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কৃষকদের কথা চিন্তা করে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই আলু সংরক্ষণাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যা ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা এই সংরক্ষণাগার একদিকে যেমন ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি এর মাধ্যমে বছর জুড়ে বাজারে মিলবে আলুসহ কন্দাল জাতীয় ফসল। কৃষকরা প্রতিটি এলাকায় এমন স্টোর স্থাপনে কৃষি বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তাদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আমরা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে এমন আরও সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য সুপারিশ করেছি বলে তিনি জানিয়েছেন।
অদিত্য/ফয়সাল
আরো পড়ুন