ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হার্ট অ্যাটাকের এসব লক্ষণ অবহেলা করছেন না তো?

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ৬ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:৪৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
হার্ট অ্যাটাকের এসব লক্ষণ অবহেলা করছেন না তো?

নিঃসন্দেহে হার্ট অ্যাটাক ভয়ানক ঘটনা। অনেকেরই ধারণা, হার্ট অ্যাটাকে বুকে ব্যথা হবেই। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, সবসময় এমনটা হয় না। হার্ট অ্যাটাকের এমনও কিছু লক্ষণ আছে, যা অবহেলিত হয়ে থাকে। এমন অবহেলায় প্রাণও চলে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওমেন’স হার্ট হেলথ ক্লিনিকের পরিচালক পুরবী পার্বনী বলেন, ‘কিছু উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ জরুরি চিকিৎসা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- বুকে অস্বস্তিকর চাপ বা ভার অনুভব করা (সাধারণত বুকের মধ্যখানে) এবং বুকে অস্বস্তির পাশাপাশি শরীরের উপরিভাগের অন্যান্য অংশে ব্যথা (ঘাড়, গলা, চোয়াল, বুকের বামপাশ ও বাম বাহু)।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক হার্ট ইনস্টিটিউটের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড রাইট বলেন, ‘নারী ও বয়স্কদের হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গ বুকে ব্যথা বা অস্বস্তির পরিবর্তে অন্যকিছুও হতে পারে, যেটিকে আপনার কাছে সাধারণ মনে হতে পারে।’ নারীদের বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে- যেখানে তাদের বমিভাব, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, অস্বাভাবিক দুর্বলতা ও ঘামানোর পর শরীর ঠান্ডা হতে পারে। কেবল প্রধান ধমনী নয়, নারীদের ছোট ছোট রক্তনালীতেও প্রতিবন্ধকতা হয় বলে এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণত নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি বার্ধক্য পৌঁছলে প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। নারীদের বয়স ৭২ এর কাছাকাছি হলে প্রথম হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, অন্যদিকে পুরুষদের আরো কম বয়সে (৬৫ বছরে) প্রথম হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে কিনা বুঝবেন যেভাবে

কিছু বিষয় পূর্বাভাস দিতে পারে যে, কেউ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন। উদাহরণস্বরূপ, হার্ট অ্যাটাকের একটি অনিবার্য ঝুঁকিময় বিষয় (রিস্ক ফ্যাক্টর) হলো বার্ধক্য। এসময় ধমনীতে প্লেকের পরিমাণ বেড়ে যায়। জীবনযাপনের কিছু বদভ্যাসও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন- ধূমপান ও অলসতা। হার্ট অ্যাটাকের আরো কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর হলো-

* পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কেউ হৃদরোগে ভুগলে বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে আপনারও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে। আপনার বাবা বা ভাইয়ের ৫৫ বছরের পূর্বে এবং মা বা বোনের ৬৫ বছরের পূর্বে হার্ট অ্যাটাক হলে আপনিও ঝুঁকিমুক্ত নন।

* উচ্চ কোলেস্টেরল: শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে ধমনীর প্রাচীরে প্লেক গঠনের অংশ হয়ে যায়। প্লেক যত বাড়বে, ধমনীতে তত প্রতিবন্ধকতা হবে। প্রতিবন্ধকতায় রক্তপ্রবাহ কমে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

* উচ্চ রক্তচাপ: হাইপারটেনশনের (উচ্চ রক্তচাপ) চিকিৎসা না করলে রক্তনালী ও হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হতে থাকে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

* স্থূলতা: ২০২০ সালের একটি গবেষণা বলছে, স্থূল বা নাদুসনুদুস শরীরে মাল্টিপল হার্ট অ্যাটাকের বাড়তি ঝুঁকি আছে। পূর্বের অনেক গবেষণাও এমন ধারণা দিয়েছে।

* ডায়াবেটিস: এটাও সময় পরিক্রমায় রক্তনালীর ক্ষতি করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও হার্ট অ্যাটাকের বাড়তি ঝুঁকিতে আছেন, বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস বেশ পুরোনো হয়েছে অথবা যারা রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদাসীন।

* সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন: শরীরে প্রদাহ হলে সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন বেড়ে যায়। শরীরে সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিনের উচ্চ মাত্রা ক্রনিক রোগের নির্দেশক হতে পারে। উচ্চ মাত্রার সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তিনগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ডা. পার্বনীর মতে, এসব প্রচলিত রিস্ক ফ্যাক্টর ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হওয়া সম্ভব। এমনকি বার্ধক্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি হলেও তরুণদের নিজেদেরকে ঝুঁকিমুক্ত মনে করা উচিত নয়। ডা. পার্বনী আরো জানান, ‘সাধারণত তরুণ ও বয়স্কদের হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গে তেমন পার্থক্য নেই। তবে বয়স্কদের ডায়াবেটিস থাকলে নীরবে (স্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই) হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়