ঢাকা     বুধবার   ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৭ ১৪৩১

ইতালি আ.লীগের অনৈক্যের নেপথ্যে

এসকে রেজা পারভেজ, ইতালি থেকে ফিরে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৬:৫৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইতালি আ.লীগের অনৈক্যের নেপথ্যে

সর্বইউরোপীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে এক সময়ের শক্তিশালী ইউনিট ইতালি আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে দুর্বল ইউনিটে পরিণত হয়েছে। নেতৃত্বের লোভে নির্বাচিত কমিটিকে হটিয়ে কৌশলে ইতালি আওয়ামী লীগের একটি অংশ স্ব-ঘোষিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে দলীয় কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে দলের এই ইউনিটটিতে কার্যত এখন চলছে কাঁদাছোড়াছুড়ি। চরম বিভেদে স্থবির দলীয় কর্মকাণ্ড। কেন্দ্র থেকেও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করায় দুটি গ্রুপই এখন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে।

ইতালি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র এবং সেখানকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিছ ফরাজী এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল সর্বইউরোপীয় ইউনিটগুলোর মধ্যে এই ইউনিটকে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কোভিডের কারণে সম্মেলন করতে না পেরে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংগঠনের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করে আবারো ইদ্রিছ ফরাজী এবং হাসান ইকবাল নেতৃত্বে আসেন।

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ইতালির রোমে ওই সম্মেলন হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সর্বইউরোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম এবং প্রধান বক্তা ছিলেন সর্ব ইউরোপ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান। ইতালির ২৫টিরও বেশি শহর থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ইউরোপের ১৫টি দেশের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইতালির এই সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরে সর্ব ইউরোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নতুন নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানান।

আরো পড়ুন:

সম্মেলনে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাশেম, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খোন্দকার হাফিজুর রহমান, জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি বশিরুল আলম সাবু,পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল আলম জসিম, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন মজুমদার, গ্রিস আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, মাল্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিয়ার রহমান, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, জার্মান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস চৌধুরী, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান, স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিজভি আলম, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, মাল্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাওসার আমিন হাওলাদার, মাল্টা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাজিব দাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক, গ্রিস আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করে ইতালি  আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিজেরা তড়িঘড়ি করে কিছুদিন পর ছোট একটি হলরুমে পাল্টা সম্মেলন করে নতুন সভাপতি হিসেবে মাহতাব হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. আলমগীর হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। এ নিয়ে মূল সম্মেলনের অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলেও বিদেশে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে নির্দেশ দেন ইতালি আওয়ামী লীগের মূল সভাপতি ইদ্রিস ফরাজী।

জানতে চাইলে ইদ্রিস ফরাজী বলেন, সর্বইউরোপ আওয়ামী লীগের একটি সুসংগঠিত একটি ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু সেখানে যদি নোংরামী জায়গা করে নেয় তাহলে আর কি বলার আছে। নিশ্চয়ই দলের দায়িত্বশীলরা এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।

জানা গেছে, পরে যেভাবে সম্মেলন হয়েছে সেটির গঠনতান্ত্রিক কোনো নিয়ম নেই। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের সম্মেলন গঠনতন্ত্র বিরোধী। ইউরোপের দেশ হওয়ায় এর দেখভালের দায়িত্বও সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের হাতে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সর্বইউরোপীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃদ্বয় মাহতাব হোসেন, আলমগীর হোসেনসহ পাঁচজনকে শোকজ চিঠি পাঠায়। কিন্তু শোকজের কোনো চিঠি না দিয়ে কৌশলেন আশ্রয় নেয়। কিছুদিন পর বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ইতালি ভাষায় অনূদিত করে তা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে উপহার দেন। গণভবন থেকে বেরিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচার করতে থাকেন তাদের কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সাংগঠনিক কাজের অনুমতি দেওয়ার একটি কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। কার্যত এটি সম্মেলন পরবর্তী নেতৃত্বের কোনো অনুমোদনের চিঠি নয়।

জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, তাদের আগে যে সম্মেলন হয়েছে তার কোনো বৈধতা নেই। ওই সম্মেলনের কথা বার্তা অবান্তর। নিজেদের সম্মেলনকে বৈধ হিসেবে দাবি করেন তিনি।

সম্মেলনে সর্বইউরোপীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন বিষয়টিকে কি বলবেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

পাল্টাপাল্টি সম্মেলন প্রেক্ষাপটে দুটি পক্ষ যখন মুখোমুখি তখন সম্প্রতি ইতালি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনার দেওয়ার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠান নিজের আয়ত্বে নিতে কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে মাহতাব-আলমগীর কমিটি। কিন্তু দুটি পক্ষ থাকায় কেউই এককভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের সম্মতি পায়নি এবং মঞ্চেও চেয়ার ছিলো শুধু প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি না থাকা স্বত্ত্বেও নিজেকে জাহির করতে হঠাৎ মঞ্চে উঠে পড়েন আলমগীর। এতে নেতাকর্মীরা তাকে দুয়ো ধ্বনি দেয়। ভুয়া, ভুয়া বলে চিৎকার করে। এই পরিস্থিতিতে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন দায়িত্বশীলরা। এ ঘটনার পর থেকে ইতালি আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইদ্রিছ ফরাজী এবং হাসান ইকবাল যেটি মূল কমিটি হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত। আরেকটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহতাব হোসেন ও মো. আলমগীর। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ আশা করছেন নেতাকর্মীরা।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়