নতুন ভুবন খুলে দিয়েছেন পেসাররা
দুর্লভ সুন্দর মোহনীয় জাদুতে আটকে রাখতে বাধ্য। তবে সেই জাদু যদি হয় কেবল মুগ্ধতা ছড়ানোর জন্যই তাহলে তা কার্যকারীতা হারায়। আর যদি সেই দুর্লভ সুন্দর থেকে ভালো কিছু হয় তাহলে বিমুগ্ধ হতেই হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বোলিং চলাকালে এমন দুর্লভ সুন্দরের সাক্ষী হতে হয়েছে। যার কৃতিত্ব যায় বাংলাদেশের পেস ব্রিগেডের ঝুলিতে। যারা ক্রমাগত বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়ে যাচ্ছেন নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে। ইবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলামরা বল হাতে এমন আগ্রাসন দেখাচ্ছিলেন যে তাদের জন্য ফিল্ডিং সেট আপ দুর্লভ সুন্দর হয়ে এসেছিল।
চার স্লিপ, দুই গালি, পয়েন্ট ও শর্ট লেগ। উইকেটের সামনে-পেছনে ফিল্ডিংয়ে এমন প্রহরী বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে কখনো দেখা মেলেনি। এমন দুর্লভ ক্যানভাস বৃহস্পতিবার আঁকা হয়ে যায় ইবাদত ও শরিফুলের সাঁড়াশি আক্রমণে। মধ্য দুপুরে নতুন বলে দুজন তাণ্ডব চালালেন মিরপুরের ২২ গজে। শরীরের ওপর তাক করা একেকটি বাউন্স, থ্রি কোয়ার্টার লেন্থ থেকে যেসব বল ভেতরে ঢুকছিল তা খেলতে বেগ পেতে হচ্ছিল আফগান ব্যাটসম্যানদের। তাতে নিয়মিত বিরতিতেই পড়েছে উইকেট। থিতু হতে না পেরে তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। পেসারদের এই বোলিং দেশের মাটিতে দেখা মেলে না বললেই চলে।
হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে স্বাগতিক দলগুলো প্রতিপক্ষকে আতিথেয়তা দেয়। বাংলাদেশের হোম অ্যাডভান্টেজ মানেই স্পিন ট্র্যাক। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলোকে স্পিন স্বর্গ বানিয়ে মিরপুরে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে আতিথেয়তা দেওয়ার আগে ভারত, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও স্প্রিন ট্র্যাকে খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ বেছে নেয় সবুজ ঘাসের উইকেট। আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণ ভালো বলেই এমন সিদ্ধান্ত।
কিন্তু পেছনে পেসারদের ওপর নির্ভরতার গল্পও শোনা যায়। তাসকিন, ইবাদত, শরিফুলরা দেশের মাটিতে ম্যাচ জেতাতে পারেন সেই ভাবনা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের যা দেশের মাটিতে নতুন ভুবন খুলে দিয়েছে। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইতে ইবাদত, তাসকিন, শরিফুলরা নিউ জিল্যান্ড দূর্গ ভেঙেছিল। পেসাররা বিদেশের মাটিতে ম্যাচ জিতিয়েছিল কন্ডিশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে গিয়েও পেসাররা নিজেদের বাহাদুরি দেখান। এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কাতেও তারা নিজেদের মেলে ধরেন।
কিন্তু নিজেদের মাটিতে পেসাররা লাল বলে উপেক্ষিত ছিলেন দীর্ঘদিন। এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে চার বছর আগে কোনো পেসার ছাড়া খেলেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে কোনো পেসার নেওয়া হয়নি। আবার কোনো ম্যাচে একজন পেসার নেওয়া হলেও বল পুরোনো করতেই তাদের ব্যবহার করতে হতো। নানা সমীকরণেই সীমাবদ্ধ থাকতো তাদের ভুবন।
অথচ দ্রুত গতির বোলারদের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। তাদের ওপর আস্থা রেখে এখন তৈরি করা হয় হোম অ্যাডভান্টেজ। মিরপুরে সবুজ ঘাসের উইকেট পাওয়া রীতিমত তাদের জন্য স্বর্গ পাওয়ার মতোন তা বোঝা গেল ইবাদতের কথায়, ‘আমার দেখা এই প্রথম যে এই ধরণের উইকেট আমরা পেয়েছি। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে তিনটা ফার্স্ট বোলার এরকম উইকেটে খেলা, এটা আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্য।’
অবশ্য কন্ডিশন পুরোপুরি বোলারদের সাহায্য করেছে। আষাঢ়ের প্রথম দিনে আবহাওয়া ছিল কিছুটা গুমোট। মাঠের একপাশ থেকে বয়ে গেছে ঝড়ো বাতাস। বল দোল খাওয়ায় ভেতরে ঢুকতে ও বাইরে যেতে বাইরে সহায়তা করেছে। রহমত শাহ, শহীদিরা টিকে থাকার লড়াই করলেও ইবাদত, শরিফুলদের তোপে হারিয়ে গেছেন অতলে। বোলিংয়ে তারা কেবল নিজেদের সামর্থ্যই বাড়াননি, কন্ডিশন বুঝে বোলিং, প্রতিপক্ষের শক্তির জায়গায় আক্রমণ, দুর্বল জায়গায় আরও চেপে ধরার মতো জটিল সমীকরণগুলো মিলিয়ে দিচ্ছে সহজে। ইবাদতের কথায় সেসব উঠে এলো, ‘আবহাওয়া মেঘলা ছিল। বাতাস ছিল। আর উইকেটেও বাউন্স ছিল। আমি যখন ওই পাশ থেকে বল করেছি তখন বাতাস অনেক সাহায্য করেছে।’
৪ উইকেট নিয়ে ইবাদত ছিলেন দুর্দান্ত, অপ্রতিরোধ্য। শরিফুল ২ উইকেট নিয়ে পায়ের নিচের জমিন শক্ত করেছেন। তাদের উজ্জ্বল দিনে তাসকিন কিছুটা আড়াল থাকলেও পেসারদের এই ভুবন পাল্টে দেওয়ার হিরো তো তাসকিন-ই। আস্থার প্রতীক হয়ে উঠা পেসাররা সামনে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিদান দিতে চান, ‘ভালো খেললে তো আত্মবিশ্বাস আসবেই। ভালো করছি। আশা করছি তাদের আস্থা থাকবে।’
ইয়াসিন/আমিনুল
আরো পড়ুন