ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

ভুল ব্যাটিংয়ে ভুলে যাওয়া দিন

ইয়াসিন হাসান, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ২৮ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৮:০৮, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
ভুল ব্যাটিংয়ে ভুলে যাওয়া দিন

নীল আকাশ যতটা সুন্দর ছিল প্রথম প্রহরে, শেষ বিকেলে ঠিক ততটাই বিবর্ণ। হিম হিম হাওয়ার সকাল দিচ্ছিল দোলা। শেষ বিকেলটা হয়ে গেল শীতের মতোই রুক্ষ-শুষ্ক-বিবর্ণ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিংয়ের মতো। সকালে যতটা সুন্দর, গোছানো; গোধূলিতে ততোটাই হতশ্রী, বিদঘুটে।

প্রভাতের লাল টুকটুকে সূর্য সব সময়ই উজ্জ্বল দিনের পূর্বাভাস দেয় না। যদি দিয়েই থাকতো তাহলে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম দিনের স্কোরবোর্ড ভুলে যেতে চাইতো না বাংলাদেশ! স্কোরবোর্ডে ৯ উইকেটে রান ৩১০। মনে হতে পারে প্রয়োজন মাফিক রান তো তুলেছে।

পাঁচ বছর আগে যেখানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৩ ও ১৬৯ করেছিল সেখানে নিউ জিল্যান্ডের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে পুঁজিতে থাকা রান তো দারুণ সম্বল। কিন্তু দিনের পোস্টমর্টেম করলে, ড্রেসিংরুমে কান পাতলে হায়-হুতাশ আর হাহাকারের আর্তনাদ শোনা যাবে। শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে যেখানে অনায়েসে বড় রান করা যেত। সেঞ্চুরির মালা পড়া যেত। সেখানে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে পুরোদিনের অর্জন মাহমুদুল হাসান জয়ের ৮৬।

টপ অর্ডার থেকে শুরু করে লোয়ার অর্ডার; ব্যাটসম্যানরা যেভাবে নিজেদের উইকেট আত্মহত্যা করেছেন তাতে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও কম হয়ে যায়। জরিমানার সুযোগ থাকলে প্রবল চাপে থাকা চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন! একেকটি বাজে শটে একেক ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে। অধিনায়কত্বের অভিষেকে ঝড়ো শুরুর পর গ্লেন ফিলিপসকে এগিয়ে এসে শান্ত যেভাবে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিড অফে তাতে হতবিহ্বল হয়ে যায় সফরকারী শিবিরও। এভাবেও কেউ আউট হতে পারে!

ফুলটস বল এসে উড়াতে গিয়ে শান্ত উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হন। অধিনায়কের ওই আউট যতোটা কষ্ট বাড়িয়েছে, মুশফিকের ফিরে যাওয়া সেটা দ্বিগুণে পরিণত করেছে। এজাজ পাটেলের বল এগিয়ে এসে ওড়াতে গিয়ে সোজা উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ। যে বল চাইলেই ডিফেন্স করতে পারতেন, কিংবা সুন্দর ড্রাইভ খেলতে পারতেন…দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার চরম বাজে শটে আউট।

ব্যাটিং অর্ডার যত গভীরে যায় আত্মহত্যার মিছিলও লম্বা হয়। মেহেদী হাসান মিরাজ পেসার কাইল জেমিনসনের বল কি করতে চেয়েছিলেন তা নিজে বলতে পারবেন। মতিভ্রম হয়ে আলগা শট খেলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ১০২তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত হওয়া শাহাদাত হোসেন দিপু এগিয়ে এসে মিড উইকেটে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন। সোহান উইকেটের পেছনে খোঁচা দিয়ে আউট। নাঈম এক হাত দূরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন। শান্তকে দিয়ে শুরু। নাঈমকে দিয়ে শেষ। ছয় ব্যাটসম্যান অতিথিদের উইকেট উপহার দিয়ে প্রবল চাপে ফেলেছে বাংলাদেশকে। যার ফলাফল দিন শেষে ৯ উইকেট।

প্রথম দুই সেশনে জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারানো বাংলাদেশ শেষ সেশনে হারায় পাঁচ উইকেট। দলের সেরা ব্যাটসম্যান জয় ৮৬ করেছেন দারুণ সব শট খেলে। ১৬৬ বলে ১১ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটি তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলে পূর্ণতা পেত।

কিন্তু লেগ স্পিনার শোধীর বলে ওপেনার জয় ক্যাচ দেন প্রথম স্লিপে। তার সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি বেঁধেছিলেন মুমিনুল। প্রত্যাশা মুমিনুলের থেকেও বড় ছিল। কিন্তু ফিলিপসের শিকার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। উইকেট ঘেঁষা বল কাট করতে গিয়ে ব্যাট-বলের রসায়ন জমাতে পারেননি তিনি। হালকা চুমু খেয়ে বল যায় ব্লানডেলের গ্লাভসে। ৩৭ রানে থামে তার ইনিংস।

উইকেট নিয়ে রহস্য ছিল। পাঁচ বছর পর পাঁচদিনের উইকেট প্রথম দিন কেমন ব্যবহার করে তা ছিল দেখার। পুরোদিনের খেলা দেখে বোঝা গেছে, পেসারদের জন্য তেমন কিছুই নেই এই উইকেটে। দিনকে দিন উইকেট ভাঙবে। তাতে স্পিনাররা পরের দিকে হয়ে উঠবেন ভয়ংকর। আজকের স্কোরশিটে গ্লেন ফিলিপস আর এজাজ পাটেলের অর্জন দেখলে কিছুটা অনুমান করা যাবে। ৫৩ রানে ফিলিপসের শিকার ৪ উইকেট।

প্রথম সেশনে ৩.৮৫ রান রেটে রান তোলা বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনেও ছন্দ পেয়েছিল। কিন্তু শেষ সেশনে সব ওলটপালট। পুবের সূর্য পশ্চিমে ডুবতে ডুবতে বাংলাদেশের ইনিংসও অস্তমিত হয়ে যায়।

বাঁহাতি স্পিনার এজাজের বল যেভাবে ছোবল দিয়ে জাকিরের স্ট্যাম্প ভেঙেছিল তাতে মনে হয়েছিল সারাদিন স্পিন ঘূর্ণিতে নাকানিচুবানি খেতে হবে। কিন্তু ২২ গজে গিয়ে শান্ত প্রতি আক্রমণ করায় দ্রুত রান উঠে স্কোরবোর্ডে। এগিয়ে এসে এজাজকে লং অন ও অফ দিয়ে দুটি ছক্কা উড়িয়েছেন। স্লগ সুইপে মিড উইকেট গিয়ে হাঁকিয়েছেন ছক্কা। কিন্তু তার পা কাটে পার্ট টাইম বোলারে। শান্তকে আউট হয়ে নিজেই অবাক হয়ে যাওয়া ফিলিপস পেয়ে যান টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম উইকেট।

সেখান থেকে জয় ও মুমিনুল জুটি বাংলাদেশকে উদ্ধার করে। কিন্তু মুমিনুলের বিদায়ে ছন্দপতনের শুরু হয় চা-বিরতির ঠিক আগে। জয় তালিকাটা লম্বা করেন। সেই রেশ থেকে যায় দিনের শেষ পর্যন্ত। আলোক স্বল্পতায় ৫ ওভার খেলা হয়নি। লেজের দুই ব্যাটসম্যান শরিফুল ও তাইজুল ১৯ বলে ২০ রান তুলে দলের রান তিন’শ অতিক্রম করিয়েছেন। বুধবার দ্বিতীয় দিনে তাদের ব্যাট কতোটুকু লড়াই করতে পারে সেটাই দেখার। তারা যেটাই করে সেটাই বোনাস।

টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় স্কোরের যে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ব্যাটসম্যানরা তাতে ম্যাচের এফিটাফ লিখা না হয়ে গেলেই ভালো।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ