ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

যে গুহার শেষ নেই

তৈয়বুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২৫ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে গুহার শেষ নেই

তৈয়বুর রহমান : ম্যামথ কেভ, যা কেনটাকি ম্যামথ কেভ ন্যাশনাল পার্কের মূল আকর্ষণ। শুধু বর্তমানকালে নয়, শত শত বছর ধরে এটি আকর্ষণ করে চলেছে গুহা অনুন্ধানকারীদের।

 

এখানকার ভূগর্ভস্থ নদীতেই প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় কানা বা অন্ধ মাছের। গুহার এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জিপসাম ফুলের ঝোঁপ, প্রায় খাড়া খনি অথাৎ খনির ঢাল নিচে নেমে গেছে প্রায় খাড়াভাবে।।

 

এ ছাড়া মুখ হা করে থাকা আরো কয়েকটি খনিও আছে সেখানে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, গুঁহার শেষ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি, ঠিক যেন একটি গোলক ধাঁধাঁ।
 
‘এখানে ঢুকেই মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন লোকজন। কৌতূহলও নাড়া দিতে থাকে তাদের মনকে। বারবার জিজ্ঞেস করেন, কত বড় এটি, কতদূর যেতে হবে, কত ধরনের উপ-গুঁহা আছে - এ ধরনের হাজারো প্রশ্ন করতেই থাকেন তারা একের পর এক’- বললেন রজার ব্রুকার। বিশ্বের অজানা স্থান খুঁজে বেড়ানো ব্রুকারের নেশা, তার কাজও। বর্তমানে বয়স ৮১ বছর। এই বয়সেও তার নেশার ঘোর কাটেনি।
  
এক সময় ম্যামথ কেভের মানচিত্র তৈরির গোপন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গুহা অন্বেষণকারী রজার ব্রুকার। এটিই যে পৃথিবীর দীর্ঘতম কেভ সিস্টেম, সেটিও প্রতিষ্ঠা করতে সহয়তা করেন তিনি।

 

 

মানুষজনের কৌতূহল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ব্রুকার বলেন, ‘গুহার মধ্যে এত রহস্যের সমাহার ঘটেছে যে, একের পর এক তা উদঘাটন করতে গিয়ে লোকজন হাপিয়ে ওঠেন। তখন তড়িঘড়ি করে শেষ করতে চান তাদের অভিযান। তাই তো তারা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকেন নানা প্রশ্ন।’

 

লেখক, কর্মকর্তা, শিক্ষক, আন্দোলনকর্মী, সবাই তাদের পছন্দমতো হ্যাট পরে থাকেন। ব্রুকারও হ্যাট পরেন। কিন্তু তার পছন্দ কার্বাইড ল্যাম্প সামনে রেখে কাজ করা। ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ম্যামথ গুঁহা সিস্টেমের শেষ মাথায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি, যার ম্যাপ তৈরি করা হয়নি।

 

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, এই সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান করে তিনি পৃথিবীর অজানা অনেক বড় বড় কাহিনি তুলে ধরেন মানুষের সামনে। এর মধ্যে পৃথিবীর বৃহত্তম গুহা ব্যবস্থা হিসেবে ম্যামথ কেভের কথাও রয়েছে।

 

তরুণ গুহা অন্বেষণকারীদের একটি দল ম্যামথ কেভ ন্যাশনাল পার্কের আশপাশের ফ্লিন্ট রিজের অন্যান্য গুহা নিয়ে অনুসন্ধান করেন। ১৯৫০- এর দশকে এই দলটিতে যোগ দেন ব্রুকার। পরে তারা সবাই মিলে প্রতিষ্ঠা করেন কেভ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। স্থানীয় সব গুহাকে বিশাল একটি গুহা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করার আশা করছেন তারা।

 

সেই সময় পর্যন্ত ম্যামথ কেভ সিস্টেমের মানচিত্র ছিল অসংলগ্ন। এ ছাড়া মানচিত্র তৈরির কাজটিও গোপন রাখা হয়। ১৮৪০- এর দশকে স্টেফান বিশপ নামে এক ক্রীতদাস ম্যামথ গুঁহা ব্যবস্থার জানা গুহাগুলোকে নিয়ে একটি স্কেচ প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য তিনি গুহা-গাইড হিসেবে পরিচিতি পান। এখন যেসব মানচিত্র পাওয়া যাচ্ছে তাতে যেমন ম্যামথ গুহা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি ভাসাভাসাভাবে তুলে ধরা হয়েছে নানা তথ্য। এ কারণেই কেভ রিসার্চ ফাউন্ডেশন পূর্ণাঙ্গ একটি ম্যাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

 

‘আমার নেতৃত্বে গুহা ব্যবস্থার একটি মানচিত্র তৈরি করা হয়,’ নিজের কাজের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলছেন ব্রুকার। এই মানচিত্রটি তৈরি করতে গিয়ে অব্যাহতভাবে জরিপ কাজ চালাতে হয়। গুহা রিসার্চ ফাউন্ডেশন ফ্লিন্ট রিজ ব্যবস্থার অন্যান্য গুহার সঙ্গে ম্যামথ গুহা ব্যবস্থার সংযোগ স্থাপন করে। এর ফলে ম্যামথ গুহার দৈর্ঘ দাঁড়ায় ১৪৪ মাইল (প্রায় ২৩১ কিলোমিটার)।

 

চল্লিশ বছর পর ম্যামথ গুঁহার সঙ্গে যোগ হয় আরো কয়েকটি গুহা। ফলে ম্যামথের দৈর্ঘ গিয়ে দাঁড়ায় ৪০৫ মাইল (প্রায় ৬৫২ কিলোমিটার)। পরে মেক্সিকোর সিসটেমা স্যাক অ্যাকটুন নামে প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের ‘শেষ মেলে না তত্ত্ব’-এর ভিত্তিতে ব্রুকার ও তার সহকর্মী জেমস ডি বর্ডেন হিসাব করে দেখান গুহাটির দৈর্ঘ এক হাজার মাইল (১৬০০ কিলোমিটার) অথবা তারও বেশি।

 

মাটির ওপরে জরিপ করা ও মাটির নিচে জরিপ করার মধ্যে পার্থক্য আছে বিস্তর। ব্রুকার বলছেন, তিনি নিজেই মাত্র ১২০ মাইল জরিপ করতে পেরেছেন।

 

বেশিরভাগ মানুষ ম্যমথ গুহার যতটুকু দেখতে সক্ষম হন, তার চেয়ে তিনি গেছেন অনেক বেশি দূর। জন-মানুষের জন্য খোলা রয়েছে ম্যামথ গুহার মাত্র ১২ মাইল (প্রায় ১৯ কিলোমিটার)। পরের অংশটুকু রাখা হয়েছে গুহা অন্বেষণকারী ও বিজ্ঞানীদের জন্য।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুলাই ২০১৬/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়