ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে জীবনযুদ্ধ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৩, ১ মে ২০২৪   আপডেট: ২৩:০১, ১ মে ২০২৪
আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে জীবনযুদ্ধ

তীব্র গরমে সবাই যখন নাভিশ্বাস। একটু স্বস্তির জন্য ঠান্ডা পানি পান কিংবা ছায়ার মতো জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায় অনেককে। তখন এই মানুষগুলো পরিবারের কথা চিন্তা করে আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। শুধু পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য।

ঝালকাঠিতে চলছে তীব্র তাপদাহ। এর মধ্যেই আগুনের পাশে বসে কাজ করছেন কামার দীপক দাস (৪৪)। তিনি রাজাপুর উপজেলা ইন্দ্রপাশা গ্রামের বাউল রতন দাসের পুত্র। শুধু দীপক দাসই নয়, জেলার প্রায় অর্ধশত কামার তীব্র গরম উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে কাজ করে চলছেন।

কথা হয় দীপক দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাবা বাউল সঙ্গীতশিল্পী হলেও তার মূল পেশা ছিলো কামার। ১৪ বছর বয়সে তার সঙ্গেই কাজ শুরু করেছি। তিনি ২০২১ সালের ২০ জুন দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যান। তার মৃত্যুর পূর্ব থেকেই আমি এ ব্যবসার হাল ধরি। ২০০৬ সালে বিয়ে করি। সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।

দেশের চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে আগুনের তাপ থেকে দূরে থাকতে পারেননি দীপক দাস। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে যেতে হচ্ছে। বলেন, রোদের তাপে আগুনের পাশে বসে কাজ করতে জানটা বের হয়ে যাচ্ছে। ঘামে শরীর ভিজে চামড়াও নরম হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘামের সাথে গলে গলে নামছে। জীবিকার তাগিদে অন্য কোনও উপায় নেই বলেই মানিয়ে নিয়েছি।

দীপক আরও বলেন, দীর্ঘ সময় কাজ করার মধ্যে এই রকম তাপ কখনো মোকাবিলা করিনি। গরমে আসলেই অনেক কষ্ট হয়। কী করবো, পরিবারের দিকে তাকালে বিশ্রাম নিতে মন চাই না। 

দীপকের মতো আরও অনেকেই আগুনের তাপের পাশে বসে কাজ করছেন। ৬৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ কানাই লাল হালদার জানান, ৪০ বছর ধরে দৈনিক মজুরি হিসেবে কামারের দোকানে কাজ করছেন তিনি।

তিনি বলেন, এই গরমের মধ্যে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়। পরিবার আছে, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আবার কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। গরমের জন্য ঘরে বসে থাকলে তো পেট চলবে না। 

বিবর্জিত চেহারায় শ্রমিক মো. শফিক বলেন, প্রচুর গরম। এই গরমে কাজ করতে মন চাই না। সারা শরীরের জামাকাপড় সব ভিজে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাই। এই পানি কই যায় কোনও স্টেশন নাই।

তীব্র গরমে যারা আগুন নিয়ে কাজ করছেন তাদের হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে আগুনের পাশে বসে যারা কাজ করেন তাদের। গর্ভবতী নারী ও বাচ্চাদের এ সময়ে আগুনের পাশে যাওয়া যাবে না। শুধু বাচ্চারা নয়, আগুন থেকে বৃদ্ধ যারা আছেন এই গরমে তাদের নাতিশীতোষ্ণ জায়গায় রাখতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এ ছাড়াও কিছুক্ষণ কাজ করার পর বিশ্রাম নিতে হবে। আর অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলার পরামর্শও দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।

অলোক সাহা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়