কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে রাতের সৈকতে আপ্লুত পর্যটক
তারেকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
ছুটে বেড়ানোর মতো মন কেড়ে নেওয়া বালিয়াড়ি, নিরব-নিঝুম রাত এবং আকাশে তারাদের খেলা- এ যেন এক অন্য ভুবন।
দিনের কোলাহলে হয়তো সাগরের গর্জন একটু কম কানে বাজে কিন্তু মধ্যরাতে ঢেউয়ের শো শো গর্জন আর সমুদ্রতটে আছড়ে পড়া বিশাল আকারের ঢেউ দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কিছু দূরে মাঝসমুদ্রে খেয়াল করলে মনে হবে মাছধরার নৌকাগুলোর বাতি জোনাকি পোকার মতো মিটমিট করে জ্বলছে। সৈকতের ফ্লাডবাতির আলো পড়ে আভা ছড়াচ্ছে বালিয়াড়ি পেরিয়ে সমুদ্রের বুকে।
এমন সব দৃশ্যে আপ্লুত দর্শনার্থী নিমেষেই ভুলে যান তার পেছনের ক্লান্তি, আর এভাবেই স্বার্থক করে তুলবেন বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ভ্রমণ।
শুক্রবার (৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টায় কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রাতপ্রিয় গুটিকয়েক পর্যটক রাতের সুমদ্র ও সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। যুগলরা জোড়ায় জোড়ায় আর সিঙ্গেলরা একাকিত্ব মনে আকাশের তারায় আবিষ্ট হয়ে আছেন।
কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা একঝাঁক বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করেছেন কক্সবাজারে শুধু রাতের সৌন্দর্যই উপভোগ করবেন তারা। তাই ডিনার শেষ করে নেমে পড়েছেন সুগন্ধা সৈকতে। রাতের সমুদ্র দেখতে দেখতে নিজেদের হারিয়েছেন অন্য জগতে। তারা জানান, রাতটাই যেন সমুদ্রের বালিয়াড়িতে কাটিয়ে দেবেন।
তখনো বাড়ি ফেরেনি স্থানীয় ঝিনুক বিক্রেতা ৭ বছরের টুনটুনি। সে ঝিনুক মালা হাতে দৌঁড়ে যায় পর্যটকের কাছে। অনেকেই মালা কিনেন আবার অনেকেই মিষ্টিমুখে হেসে নাকচ করেন।
কথা হয় রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা রাব্বি হায়দারের সঙ্গে। তিনি কক্সবাজারে বেশ কয়েকবার আসলেও রাতে ঘুরতে বের হন না। এবার বউ নিয়ে শুধু রাতের সৈকতে ঘুরবেন বলে বউয়ের সঙ্গে বায়না ধরে বেড়াতে এসেছেন।
রাব্বি হায়দার বলেন, `করোনার আগে বেশ কয়েকবার কক্সবাজার এসেছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির পর এবার আসলাম। আগে কক্সবাজার আসলেও রাতে বের হতাম না। এবার কিন্তু রাতের সৈকত উপভোগ করতেই কক্সবাজার এসেছি। রাতের সৈকত দেখে অন্যরকম অনুভূতি লাগছে। সত্যিই অসাধারণ। নিঝুম রাতে বউকে নিয়ে সৈকতে এসে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছি। রাতের এ অপরূপ সৌন্দর্য ফেলে হোটেলে ফিরে যেতে মন চায় না।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের রাতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেশ কিছু পর্যটককে মধ্যরাতেও সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছাতার নিচে চেয়ার হেলান দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ বালিয়াড়িতে হাঁটছে। আবার কেউ কেউ পশ্চিমে মুখ করে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউ, আকাশ আর তারা দেখার ধ্যানে আছে।
রাতের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলায় গলা মিলিয়ে গান ধরেন অনেকে। কেউ নিঝুম রাতের গান গেয়ে মনে করে পুরনো স্মৃতিকে। রাত গভীর থেকে গভীর হলে সৈকতের বুকে নেমে আসে শূন্যতা, সব আয়োজন ফিরে ধীরে ধীরে সমাপ্তির পথে পা বাড়ায়। হোটেল বা আস্তানায় ফিরে শেষ রাতের নিদ্রায় হয়তো সমুদ্র সৈকতেই হয় তাদের স্বপ্নিল অবগাহন।
কক্সবাজার/টিপু