ক্ষমা পেতে হলে সবাইকে ক্ষমা করতে হবে
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
এ আয়াতের মর্ম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিবরাঈল (আ.) বলেন, ‘হে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তায়ালা আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক বিছিন্ন করে, আপনি তার সঙ্গে সম্পর্ক অবিছিন্ন রাখুন। যে আপনাকে বঞ্চিত করে, আপনি তাকে দান করুন এবং যে আপনার প্রতি অবিচার-অত্যাচার করে, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ৭১৫)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায় ; যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সম্বরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককার লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৪)
ক্ষমাশীল ও ধৈর্যবানের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরবে ও ক্ষমা করবে, সন্দেহাতীতভাবে এটা বড় উচ্চমানের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের অন্যতম।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৪৩)
মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়াটা তাকওয়ার পথ মসৃণ করে। ক্ষমা তাকওয়ার নিকটবর্তী গুণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সদকা করাতে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার সম্মান প্রতিষ্ঠিত করে দেন।’ (সহি মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা মানুষকে ক্ষমা করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (আল-ইমরান : ১৩৪)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আরও বলেন, ‘আর অন্যায়ের প্রতিশোধ অন্যায় অনুপাতে হয়ে থাকে। কিন্তু অন্যায়কারীকে শোধরানোর উদ্দেশ্যে যে ক্ষমা করে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আশ-শুআরা, ৪০)।
এই রকম আরো বহু আয়াত ও হাদিস রয়েছে যার মূল কথা হলো, মানুষকে ক্ষমা করা এবং মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহ খুশি হন, তিনিও তার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সঙ্গে কত বড় অপরাধ করতে পারে? আমরা ক্ষুদ্র বলে অন্যের করা অপরাধ আমাদের কাছে বড় মনে হয়। আমরা যদি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ ও দানের বিবেচনা করি এবং তার বিপরীতে আমাদের নাফরমানি ও পাপাচারের কথা বিবেচনা করি তাহলে এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের করা অপরাধ কোনো অপরাধের কাতারেই পড়ে না। তারপরেও আমাদের ক্ষুদ্রতায় তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মাগফিরাতের এই দশকে যখন আমরা পাহাড়সম অপরাধ নিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইছি তখন আমাদের কর্তব্য হবে আল্লাহর নির্দেশনা মেনে সবাইকে মাফ করে দেওয়া। যে আমার সম্পত্তি জবরদখল করেছে, আমার যে সম্পদ চুরি বা ডাকাতি হয়েছে, আমাকে যারা অন্যায়ভাবে মেরেছে বা আমার সম্মানহানী করেছে বা আমার ক্ষতি করেছে তাদের সবাইকে আমরা এই দশকে মাফ করে দেবো। আমি যদি মাফ করে দেই তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি হওয়া সেই জুলুমের বদলা আরো উত্তমরূপে আমাকে দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন কিছু ঘটনা থাকে যা সে কোনোদিন ভোলে না। তেমন কঠিন বিষয়গুলোকেও আমরা মাফ করে দেবো।তারপরে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করবে , হে আল্লাহ! আমার ক্ষুদ্রতায় যাদের কাজকে আমার প্রতি অপরাধ মনে হয়েছে তোমার নির্দেশনা মেনে তাদের সবাইকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। এখন তুমি আমার সব অপরাধ ও গুনাহ মাফ করে দাও।
আমি যদি আমার বিবেচনায় অপরাধ মাফ করতে না পারি তাহলে আমি কি করে তার চেয়ে লক্ষগুণ বেশি পাপ নিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাই? সেজন্য আসুন! ক্ষমা প্রাপ্তির আশায় আমরা সবাই সবাইকে ক্ষমা করে দেই।
শাহেদ/তারা