ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘গোলাপ গ্রামে’ অজানা রোগের হানা, চাষিদের হাহাকার

আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৮:৪১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘গোলাপ গ্রামে’ অজানা রোগের হানা, চাষিদের হাহাকার

কদিন বাদেই ‘ভালোবাসা দিবস’, তারপরই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বছরের এই সময়টাতে ভালো ব্যবসার আশায় বুক বাঁধেন ফুলচাষিরা। তবে হঠাৎ অজানা রোগে ফুলে মড়ক ধরায় সেই আশা রূপ নিয়েছে হাহাকারে। বাগানেই ঝরে যাচ্ছে গোলাপের কলি, শুকিয়ে মরে যাচ্ছে গাছের ডালপালা।

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্নীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাবো, সামাইর, সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, ভবানীপুর, বনগ্রাম, আক্রানসহ অন্তত বিশটি গ্রামে প্রায় ৩ শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে দুই শ’ হেক্টর জমিতে শুধু গোলাপ ফুলেরই চাষ হয়। বাকি জমিতে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন জাতের ফুলচাষ হয়।

এসব গ্রামের বেশিরভাগ চাষি ফুলচাষে জড়িত। এখানকার উৎপাদিত ফুল রাজধানীসহ আশপাশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও পাঠানো হয়। তবে গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের কারণে ফুল বিক্রি না করতে পারায় লোকসানে পড়েছিলেন চাষিরা। সম্প্রতি পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’কে সামনে রেখে ক্ষতি কাটানোর আশা দেখছিলেন তারা। তবে ভরা মৌসুমে গোলাপের এমন অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা, ঋণের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গোলাপচাষিরা।

চাষিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুল ও গাছকে বাঁচাতে নানা চেষ্টা করলেও কিছুই কাজে আসছে না। নিজেরা বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকেও পরামর্শ নিচ্ছেন। কোন কিছুতেই কাজ না হওয়ায় গোলাপগ্রামে চাষিদের মাঝে চাপা কান্না বিরাজ করছে।  

সোলায়মান নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক ফুলচাষির সঙ্গে কথা হয়। বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছিলাম। এজন্য প্রায় দেড় লাখ টাকা ঋণ করে গত ৯ মাস ধরে নিজে ও শ্রমিকদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সার, কীটনাশক ও ভিটামিন দিয়ে বাগানের পরিচর্যা চলছিল। সম্প্রতি বাগানে প্রচুর ফুলের কলিও আসতে শুরু করে। আসন্ন ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভালো দামে ফুল বিক্রি করে খরচ উঠে আসবে, এমনটিই আশা ছিল। তবে গত ১৫ দিন ধরে গোলাপ বাগানে অজানা রোগের কারণে ফুলের কলি বের হওয়ার সাথে সাথে কালো হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পাপড়িতে সিট পড়ার পাশাপাশি সেগুলো পচে বাগানেই ঝড়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালেও এরকম রোগ হয়েছিল। কৃষি কর্মকর্তারা তখনও কোন প্রতিকার করতে পারেননি। এবারও গোলাপে মড়ক লাগায় আমি উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে বার বার যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এখন আল্লাহ ভরসা।

শ্যামপুর এলাকার আবুল হাসেম নামে আরেক চাষি বলেন, ৪ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছিলাম। এই ফুল বিক্রির টাকা দিয়েই সংসার চলে। এমনিতেই গত বছর বিক্রি করা না হওয়ায় ফুল বাগানেই ঝরে গেছে। এবার একটু স্বাভাবিক অবস্থা হওয়ায় ধার-দেনা করে আবার বাগান করেছিলাম। গাছে ফুল আসতে শুরু করেছিল। তবে অজানা রোগে সব ফুল মরে যাচ্ছে।

ফুলচাষি বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমদাজ হোসেন বলেন, ফুল চাষ করে বিরুলিয়ায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। গতবার গোলাপের চাহিদা না থাকায় চাষিদের প্রায় ২৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। লোকসান পুষিয়ে নিতে ৯০ শতাংশ চাষি নানাভাবে ঋণ করে আবারও ফুলবাগান তৈরি করেছেন। কিন্তু অজানা রোগের আক্রমণে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। এছাড়া সরকারিভাবে তাদেরকে ঋণ সুবিধা না দেওয়ায় বিভিন্ন সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। তাই গোলাপ গ্রামের অস্তিত্ব ধরে রাখতে চাষিদের দ্রুত সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজিয়াত আহমেদ বলেন, গোলাপ গ্রামে ফুলে মড়কের বিষয়টি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। এটা আসলে আবহাওয়াজনিত সমস্যা। শীত-বৃষ্টির পাশাপাশি ছত্রাকের আক্রমণের কারণে গাছ মাটি থেকে খাবার নিতে পারছে না। এজন্য আমরা ওষুধ দিলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কোনভাবে সহযোগিতা করা যায় কি-না ভাবা হচ্ছে। এছাড়া আমরা দ্রুত বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করছি, যাতে কৃষকরা সামনের দিবসগুলোয় ফুল বিক্রি করতে পারে।

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়