ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চোখের সামনে ভাসমান বিন্দু কতটা বিপজ্জনক?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৬ ডিসেম্বর ২০২০  
চোখের সামনে ভাসমান বিন্দু কতটা বিপজ্জনক?

প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মব্যস্ত দিনের মতো আপনি ডেস্কে বসে কম্পিউটারে টাইপ করছেন। স্ক্রিন থেকে চোখ সরানোর পর দেখলেন চোখের সামনে ধূসর বিন্দু বা রেখা ভাসছে। আপনি চশমা খুলে পরিষ্কার করে আবার পরলেন, কিন্তু তাতে কাজ হলো না। রেখা বা বিন্দুগুলোর উপস্থিতি এখনো রয়েছে। দৃষ্টিকে স্থির করলেন, কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। কেবল বিন্দু বা রেখা নয়, অন্যান্য আকৃতিও ভাসতে পারে। চোখের সামনে ভেসে বেড়ানো বিভিন্ন আকৃতিকে আই ফ্লোটার্স বলা হয়, যা ধূসর বা কালো রঙের হতে পারে। আই ফ্লোটার্স বক্ররেখা অথবা মাকড়সার জালের সুতার মতোও হতে পারে। আই ফ্লোটার্সের আকৃতি যেমনই হোক, এগুলো বেশ বিরক্তিকর লাগতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, হঠাৎকরে চোখের দৃষ্টি সীমার কাছে বিভিন্ন আকৃতি ভাসে কেন? এগুলো কি মারাত্মক রোগের লক্ষণ? অথবা এগুলো কি ভবিষ্যতে অন্ধ হওয়ার ইঙ্গিত? আমাদের চোখের পেছনে আলোক সংবেদনশীল টিস্যুর লেয়ার রেটিনাতে সংযুক্ত জেলের মতো যে তরল (ভাইট্রিয়াস) রয়েছে তা দলা পাকিয়ে গেলে তথা ক্লাম্প সৃষ্টি হলে আই ফ্লোটার্স হয়। তাই আপনার চোখের সামনে যেসব আকৃতি ভাসছে বলে মনে হয় তা বাইরের কিছু নয়, এগুলো মূলত রেটিনায় সৃষ্ট ক্লাম্পের ছায়া। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা মনিকায় অবস্থিত প্রভিডেন্স সেন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের সার্জিক্যাল নিউরো-অপথালমোলজিস্ট হাওয়ার্ড আর. ক্রাউস বলেন, ‘আই ফ্লোটার্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এক রঙা নন-প্যাটার্নড ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে তাকালে, যেমন- নীল আকাশ অথবা সাদা কাগজ বা কোনো সাদা পৃষ্ঠ।

আই ফ্লোটার্স কতটা বিপজ্জনক? আপনি জেনে ভরসা পেতে পারেন যে প্রায় প্রত্যেক মানুষই জীবনকালের কোনো না কোনো সময় আই ফ্লোটার্স দেখে থাকেন। চোখের সামনে ভাসমান আকৃতিগুলো বিপদের চেয়ে বিরক্তিকর বেশি। আমেরিকার ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউটের মতে- যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, ছানির অপারেশন হয়েছে, দূরের জিনিস ঝাপসা লাগে ও বয়স ৫০ পেরিয়েছে তাদের আই ফ্লোটার্সের ঝুঁকি বেশি। এসব কারণে চোখের সামনে কিছু ভাসলে সেটাকে আমরা বিপজ্জনক না বলে নিরীহ বলতে পারি।

তবে বিরলক্ষেত্রে রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার লক্ষণ হিসেবে চোখের সামনে কিছু ভাসছে বলে মনে হতে পারে। রেটিনা ছিড়ে গেলে বা বিচ্ছিন্ন হলে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি রয়েছে। ডা. ক্রাউস আই ফ্লোটার্সের সঙ্গে ফ্লাশ লাইট দেখলে অথবা কেন্দ্রীয়/প্রান্তীয় দৃষ্টিতে পরিবর্তন দেখলে সতর্ক হতে পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ রেটিনা ছিঁড়ে গেলে এসব লক্ষণ দেখা দেয়। ডা. ক্রাউস আরো জানান যে চোখের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, প্রদাহ ও ক্যানসারের কারণেও এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, এসব সমস্যার সম্ভাবনা খুবই বিরল। যেকারণেই হোক, হঠাৎকরে চোখের সামনে প্রচুর ফ্লোটার্স দেখলে অথবা প্রান্তীয় দৃষ্টিতে ছায়া লক্ষ্য করলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসককে জানানো ভালো।

আই ফ্লোটার্স তথা চোখের সামনে ভাসমান আকৃতিগুলো কি দূর করা সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। ২০১৭ সালে জেএএমএ অপথালমোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা মতে, বিরক্তিকর আই ফ্লোটার্স দূর করতে ওয়াইএজি লেজার (ছানির অপারেশেন যে লেজার ব্যবহার করা হয়) নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী পদ্ধতি হতে পারে। এই চিকিৎসাতে বড় ধরনের ঝুঁকি নেই। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এই চিকিৎসা জনসাধারণে প্রয়োগ করা উচিত হবে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার অপেক্ষা করতে হবে।

আই ফ্লোটার্স দূর করার আরেকটি উপায় হলো ভাইট্রেক্টমি। এই সার্জারিতে চোখের পেছন থেকে ভাইট্রিয়াস জেল অপসারণ করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ফাউন্টেন ভ্যালিতে অবস্থিত মেমোরিয়াল কেয়ার অরেঞ্জ কোস্ট মেডিক্যাল সেন্টারের অপথালমোলজিস্ট বেনজামিন বার্ট বলেন, ‘ছানির অপারেশনে ব্যবহৃত লেজার চিকিৎসার তুলনায় ভাইট্রেক্টমিতে ঝুঁকি বেশি, তাই কেবল তীব্র কেসে এই চিকিৎসা নেয়া উচিত।’

আপনার পুরোনো আই ফ্লোটার্স দৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি না করলে কোনো চিকিৎসারই প্রয়োজন নেই, কিন্তু চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করবেন চিকিৎসক। ডা. বার্ট বলেন, ‘মানুষের মস্তিষ্ক আই ফ্লোটার্সের ইমেজকে দমিয়ে রাখতে চায়। তাই আপনি এসব ভাসমান আকৃতির কথা না ভাবলে অথবা ফোকাস না করলে সেগুলো দৃষ্টিগত সমস্যায় ফেলবে না।’ যার মায়োপিয়ার সমস্যা (দূরের বস্তু অস্পষ্ট দেখা) যত বেশি তিনি তত বেশি আই ফ্লোটার্স দেখতে পারেন, তবে ব্যক্তিভেদে তারতম্য হতে পারে। সারকথা হলো, আই ফ্লোটার্স আপনাকে দৃষ্টি সমস্যায় না ফেললে উপেক্ষা করতে পারেন। আই ফ্লোটার্স থেকে সাময়িক মুক্তির একটি উপায় হলো, চোখকে উপর-নিচে অথবা বাম-ডানে মুভ করানো।

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়