ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দেড়শ টাকার রেস্টুরেন্টকর্মী থেকে তারকা শেফ ফারুক আহাম্মেদ

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ১০ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৫:৩৮, ১০ মার্চ ২০২১
দেড়শ টাকার রেস্টুরেন্টকর্মী থেকে তারকা শেফ ফারুক আহাম্মেদ

নব্বইয়ের দশকে যে শেফ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত আন্তর্জাতিক ফুডের প্রচলন করেছিলেন, তাদের অন্যতম ফারুক আহাম্মেদ। তারকামানের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের শেফদের মধ্যে ফারুক একজন খ্যাতিমান শেফ, যার ৩১ বছরের কুকিং ক্যারিয়ারে কোনো ভুলের নজির নেই। তার কোন মেনু খেতে মন্দ হয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। 

চট্টগ্রামের এই বিখ্যাত শেফ ফারুক আহাম্মেদের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মাত্র দেড়শ টাকা বেতনের একজন রেস্টুরেন্ট কর্মী হিসেবে। এখন তিনি থাই, চাইনিজ, ইন্দোনেশিয়ান, জাপানিজ এবং কন্টিনেন্টাল ফুডের একজন মাস্টার শেফ। বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন চট্টগ্রামের অভিজাত তারকা মানের রেস্টুরেন্ট বনজৌর-এ। এই রেস্টুরেন্টে তিনি প্রধান শেফ হিসেবে ১৩ জন শেফের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

আরো পড়ুন:

ফারুক আহাম্মেদ জানান, পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রেস্টুরেন্টে চাকরি নিতে হয়েছিল। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের তৎকালীন শারিনা হোটেলে (বর্তমানে ঢাকার বিখ্যাত হোটেল শারিনা) কিচেনের ডিশ ওয়াসার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। তখন তার মাসিক বেতন ধরা হয় ১৫০ টাকা। ১৪ বছরের কিশোর, সারাদিন রান্নাঘরে ডিশ ওয়াস করার মতো হাড়ভাঙা পরিশ্রম, মাস শেষে মাত্র ১৫০ টাকা বেতন। কিন্তু ফারুক ছিলেন অদম্য আর ভালো কাজ শেখার জন্য তৃষ্ণার্ত। আর তাতেই সফল হওয়ার পথ খুঁজে পান ফারুক। মাত্র ৩ বছর হোটেল শেরিনায় ডিশ ওয়াসার হিসেবে কাজ করতে করতেই রপ্ত করেন ভালো চাইনিজ কুকিংয়ের কলাকৌশল। নিজেকে আবিস্কার করতে থাকেন একজন শেফ হিসেবে। 

তিনি আরো জানান, শারিনাতে রান্নার কাজ রপ্ত করতেই চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত চাইনিজ রেস্টুরেন্ট কপার চিমনিতে শেফ হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ আসে। আর এই রেস্টুরেন্টে প্রথম জুনিয়র শেফ হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকেই মূলত কুকিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠেন এবং তার শেফ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়ে উঠে ফারুকের।

কপার চিমনিতে চাইনিজ ফুডের শেফ হিসেবে দুই বছর কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে যোগ দেন মিড নাইট সান নামক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। এরপর ২০০১ সাল থেকে চট্টগ্রামের বিখ্যাত চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিলভার স্পুন, স্টিকি ফিঙ্গার হয়ে ২০০৮ সালে প্রধান শেফ হিসেবে যোগ দেন নগরীর লর্ডস ইন হোটেলে। এই হোটেলে একটানা কাজ করেন ১২ বছর। ইতোমধ্যেই শেফ হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্ট জগতে। আর এই সুখ্যাতির সূত্র ধরেই ২০২০ সালে মাস্টার শেফ হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রামের অভিজাত তারকা রেস্টুরেন্ট বনজৌর-এ।  

বড় বড় রেস্টুরেন্টে যারা খাবার খান, তারা খাবারের স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হলেও শেফদের সঙ্গে তাদের পরিচিতি হয়ে উঠে না। কিন্তু যারা বড় বড় তারকা হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট বিজনেসের সম্পৃক্ত, তাদের কাছে একজন শেফের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আর এর মাধ্যমেই চট্টগ্রামজুড়ে রেস্টুরেন্ট শিল্পে শেফ হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন ফারুক আহাম্মেদ।

বনজৌর রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফ ফারুক আহাম্মেদ জানান, তিনি একজন ডিশ ওয়াশার হিসেবে রেস্টুরেন্ট ক্যারিয়ার শুরু করলেও নিজেকে একটি ভালো অবস্থানে দাঁড় করানোর অদম্য লক্ষ্য ছিল। এখন তিনি অনেকটা সেই অবস্থানের শীর্ষে অবস্থান করছেন। ফারুক আহাম্মেদ বলেন, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ৯০ এর দশকে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট বলতে থাই স্যুপ, কর্ন স্যুপ, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই ছাড়া অন্য কোনো খাবারের প্রচলনই ছিল না। 

তিনিই প্রথম চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের থাই, ইন্দোনেশিয়ান, জাপানিজ কন্টিনেন্টাল ফুডের প্রচলন শুরু করেন। তার হাত ধরেই কেশোনাট সালাদ, টোপা, সিকেন সাতে, সুতুয়াম স্যুপ, স্টিমওয়া ফ্রাইড রাইস, বিফ রোস্ট, ল্যাম্ব রোস্টসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক খাবারের প্রচলন করেন। বর্তমানে এসব খাবার প্রায় সব চাইনিজ রেস্টুরেন্টেই সব শেফরা তৈরি করছেন।

ফারুখ আহাম্মেদ বলেন, ‘৩১ বছরের কুকিং ক্যারিয়ারে আমার তৈরি খাবার নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আমার খাবারের স্বাদ মন্দ হয়েছে বা কোনো দিন কোনো খাবারে উপকরণ কম-বেশি হয়েছে, এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ফলে স্বাদ আর আন্তর্জাতিক মানের কারণে আমার তৈরি খাবারের খ্যাতি শহরজুড়ে।’

দুই কন্যা সন্তানের জনক বিখ্যাত শেফ ফারুক আহাম্মেদের এক মেয়ে অনার্সে পড়ছেন। অন্যজন ৭ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। দুই মেয়েকেই ব্যাংকার কিংবা বড় করপোরেট প্রফেশনাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন রয়েছে তার।

চট্টগ্রাম/রেজাউল/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়