ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বমির দাম কোটি টাকা

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৪:১৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
বমির দাম কোটি টাকা

‘বমি’ শব্দটি শোনামাত্র অনেকের গা গুলিয়ে ওঠে। অনেকে যাত্রাপথে এই বিড়ম্বনা এড়াতে প্রস্তুতি নিয়ে তারপর ঘর থেকে বের হন। ভাবছেন এমন একটা এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় এতোটা গুরুত্ব পায় কি করে? তার দাম আবার কোটি টাকা! 

এই বমি অবশ্য মানুষের নয়। সমুদ্রের রাজা তিমি মাছের বমির দাম কোটি টাকার সমান।

সমুদ্রে যে কয়েক ধরনের তিমি পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বিরল প্রজাতির হলো স্পার্ম তিমি। এই মাছের বমিকে বলা হয় ‘অ্যাম্বারগ্রিস’। এই অ্যাম্বারগ্রিসের দাম প্রতি কেজি কোটি টাকার ওপরে। স্পার্ম তিমির অন্ত্রে তৈরি মোমের মতো এই পদার্থ মাছটি উগড়ে দিলে সাগরের পানিতে ভাসতে থাকে। ভাসতে ভাসতে উপকূলে চলে আসে। এজন্য একে ‘floating gold’ বা ভাসমান সোনা বলা হয়। ‘সমুদ্রের ধন’ নামেও পরিচিত এটি।

‘অ্যাম্বারগ্রিস’ শব্দটি অ্যাম্বর ও গ্রিস শব্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি শব্দ। প্রাচীন ফরাসি শব্দ ‘অ্যাম্বের গ্রিস’ বা ‘ধূসর অ্যাম্বার’ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে শব্দটি। এর উৎস বহুকাল থেকে খুঁজে আসছে মানুষ। অতীতে অনেকেই মনে করতেন সাগরের ঢেউয়ের যে ফেনা থাকে তা জমে এটি তৈরি হয়। আবার অনেকের মতে
সমুদ্রে বিচরণকারী পাখি মরে গেলে তাদের মৃতদেহ লবণপানিতে ভাসতে ভাসতে এমন হয়। তবে এসব ধারণা ভুল প্রমাণ করে ১৮০০ সালের দিকে আবিষ্কৃত হয় যে, স্পার্ম হোয়েল নামক এক ধরনের তিমি মাছের বমি থেকেই তৈরি হয় অ্যাম্বারগ্রিস।

বিখ্যাত তিমি বিশেষজ্ঞ ক্রিসটোফার কেম্প তার বই ‘Floating Gold: A Natural (and Unnatural) History of Ambergris’-এ বলেন, অ্যাম্বারগ্রিস শুধু স্পার্ম তিমিদের দ্বারা উৎপন্ন হয় এবং তাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ এটি উৎপাদন করে।

সমুদ্রে থাকা বেশিরভাগ তিমির দাঁত নেই। বিকল্প হিসেবে তিমি ফিল্টার ফিডিং প্রক্রিয়ায় খাদ্য সংগ্রহ করে। আবার কিছু তিমির দাঁত রয়েছে যারা বড় শিকার করতে পারে। এ রকম দাঁতওয়ালা তিমি হলো স্পার্ম হোয়েল। এই প্রজাতির তিমিরা খাদ্য হিসেবে স্কুইড, অক্টোপাস, ক্যাটল ফিস, সামুদ্রিক পাখি শিকার করে।  শিকারের দেহের বিভিন্ন জায়গা হজম হয় না যেমন দাঁত, নখ, পা। এগুলো পেটের মধ্যে থেকে যায়। এসব ধারালো অঙ্গ-প্রতঙ্গের আঘাতে যাতে তিমির পেটে ক্ষত সৃষ্টি না হয় এ জন্য এদের পরিপাক তন্ত্র থেকে এক ধরনের আঠালো পদার্থ ক্ষারিত হয়ে ওই ধারালো বস্তুগুলোকে আবৃত করে রাখে। সময়ের সাথে সাথে ক্ষরণ বৃদ্ধির ফলে এই বস্তুর আকারও বৃদ্ধি পায়। এই ক্ষরণ থেকেই তৈরি হয় মহামূল্যবান অ্যাম্বারগ্রিস। 

আকৃতির কারণে এটি পায়ু পথে বের হয় না। তখন বাধ্য হয়ে তিমি বমি করে। বমির সঙ্গে বের হয়ে আসে মূল্যবান বস্তুটি। অনেক সময় অ্যাম্বারগ্রিস তিমির পেটে রয়ে যায়। যখন এটি মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে তখন অনেক তিমি মারা যায়। তখন অ্যাম্বারগ্রিসের টুকরোগুলো সমুদ্রে ভাসতে থাকে। এটি উপকূলে না পৌঁছানো পর্যন্ত বছরের পর বছর ভাসতে থাকে।

একেকটি অ্যাম্বারগ্রিসের ওজন ১৫ গ্রাম থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি দেখতে হালকা সাদা বর্ণের মোমের মতো নরম ও আঁশটে গন্ধবিশিষ্ট হয়। সময়ের সাথে সাথে এটি সূর্যের আলো ও লবণাক্ত পানির প্রভাবে শক্ত ও ধূসর বা বাদামি রঙের হয়। বয়স বৃদ্ধির ফলে এ থেকে সুন্দর গন্ধ বের হতে থাকে। 

মহামূল্যবান এই অ্যাম্বারগ্রিস মূলত পাওয়া যায় আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল, ব্রাজিল, মাদাগাস্কার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মলুচ্চা দ্বীপপুঞ্জে।

তিমির এই বমি নানা কাজে ব্যবহার হয়। এর প্রধান ব্যবহার হয় দামি সুগন্ধি তৈরিতে। এ ছাড়াও বাহারী খাবার বানাতে। ইউরোপে হট চকোলেট এবং তুরস্কে কফিতে ফ্লেভার হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। মিশরে অ্যাম্বারগ্রিসকে সিগারেটে ঘ্রাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যৌন উত্তেজক, ব্রেইন, মাথাব্যথা, সর্দি, মৃগী, হার্ট এবং ইন্দ্রিয়ের রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ হিসেবেও এর ব্যবহার আছে। 

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়