ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজশাহীতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন 

তানজিমুল হক, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:০৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
রাজশাহীতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন 

রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন। পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ট্রলির ব্যবহার এখন হারহামেশায় দেখা যাচ্ছে। এ সব যানবাহনের কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক-মহাসড়কে এ সব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ও পুলিশকে ম্যানেজ করে তা  চলছে। জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় থানা পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করলে অনুমতি মিলছে। এর ফলে এগুলোর চলাচল দিন দিন বাড়ছে। 

আরো পড়ুন:

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রলি ও ভটভটি চালক বলেন, এই যানবাহনই তাদের উপার্জনের একমাত্র উপায়। এই যানবাহন মহাসড়কে ও মহানগরীতে চলাচলের অনুমতি না থাকায় তাদের উভয় সঙ্কটের মধ্যে চলতে হচ্ছে। 

তারা আরও জানান, পুলিশকে টাকা দিয়ে তারা সড়কে গাড়ি চালানোর অনুমতি নিয়েছেন। মাসিক চুক্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে মালিক সমিতির মাধ্যমে তাদের ম্যানেজ করা হয়। এ কারণে অভিযান চললেও পরিচয় দিলে তারা ছাড় পান। তবে মাঝে মাঝে পুলিশের ওপরের চাপ থাকলে তারা মামলা দিয়ে দেন। 

এ সব অবৈধ যানবাহনের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় অন্যান্য যানবাহনগুলোকে। অবৈধ এই যানবাহনের চালকরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় ছোট-বড় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের দেশ ট্রাভেলসের চালক শের মোহাম্মদ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে গাড়ি চালান। রাজশাহীর মহাসড়কে চলাচলকারী এসব অবৈধ ছোট বাহনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এর শব্দ তীব্র হয়। কোনো লুকিং গ্লাসও থাকে না। এতে পেছন থেকে হর্ন দেওয়া হলেও তারা বুঝতে পারে না। আবার সড়কের যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ করে ইউটার্ন নিয়ে বসে। এ সব কারণে দুর্ঘটনা বেশি হয়। 

এ সব অবৈধ যানবাহন বন্ধ করতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রাজশাহীর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী এ এস এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, অবৈধ যানবাহন বলতে নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ অন্যান্য যে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস নেই। রাজশাহীতে এসব গাড়ির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে মহাসড়কে এমন বারোয়ারি যান চলাচল করে না। অননুমোদিত যানবাহনের কারণে রাস্তায় শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের ম্যানেজ হওয়ার কালচার আগে থেকে গড়ে উঠেছে। সড়ক-মহাসড়কে এমন ঘটনা সকলেরই জানা। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হয়তো এটা স্বীকার করবে না, বা করার কথাও না। তবে এমনটা হচ্ছে। যেটা মিডিয়ার মাধ্যমেও উঠে আসছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অনির্বান চাকমা বলেন, তারা প্রতিনিয়তই অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন। সাধারণত এসব গাড়ির শহরে প্রবেশ করে না। প্রবেশ করলেই মামলা দেওয়া হয়। তবে শহরে হাটের দিন কিছু নসিমন ব্যবহার করা হয় এবং রাজাশাহী সিটি করপোরেশনের রাস্তার উন্নয়ন কাজে মাঝে মাঝে কয়েকটা ট্রলি, নসিমনের ব্যবহার করা হয়। তারা সিটি করপোরেশনের কাগজ ব্যবহার করে। এগুলো বাদে অবৈধ সব গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

উপপুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এর আগে আমার কাছে অভিযোগ এসেছিলো, থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে অবৈধ কিছু গাড়ি চলছে। পরে আমি অভিযোগকারীদের ডাকি। কিন্তু এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।’ এ বিষয় নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা কাজ করছেন। তারপরও পুলিশের চোখ এড়িয়ে কিছু যানবাহন চলছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে এসব যানবাহন চলাচল বন্ধে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।
 

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়