ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সৌদির ফল সাম্মাম চাষ করে সফল খোকন

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৫:০২, ২৭ এপ্রিল ২০২১
সৌদির ফল সাম্মাম চাষ করে সফল খোকন

করোনাকালীন সময়ে বন্ধ রয়েছে কলেজ। তাই ম্যাচ থেকে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম খোকন।  

বাড়িতে বসে না থেকে আধুনিক কৃষি কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। প্রবাসী বড় ভাইয়ের পরামর্শে সৌদি আরবের ফল ‘সাম্মাম’ চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে ইন্টারনেট ও কৃষি অফিসের পরামর্শে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন তিনি। প্রথমবার চাষেই বেশ সাফল্য পেয়েছেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাইম প্রথমে ৩৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন। পুষ্টিগুণে ভরপর বিদেশি এই ফল চাষাবাদ দেশে তেমন একটা প্রচলিত নয়। ঝুঁকি ও চাষাবাদ সম্পর্কে প্রচারণার অভাবে এ ফল চাষ কম হয়।

নতুন জাতের রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে আসছেন আশেপাশের কৃষকরা। অনেককে আগামীতে নতুন জাতের রসালো ফল উৎপাদনের জন্য পরামর্শও দিচ্ছেন খোকন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই ফল গাছ কুমড়া গাছের মতো। গাছের ফাঁকে ঝুঁলছে দেশি বাঙ্গির মতো ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর। বাঁশের বাতা আর পলিথিনের জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো ক্ষেত যেন ফলে ভরে রয়েছে। এই ক্ষেতে পরিচর্যা করতে দেখা যায় নাইম ইসলাম খোকনকে।

খোকন বলেন, ‘কলেজ বন্ধ, তাই বাড়িতে অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম। বিদেশ থেকে ভাই ফোন দিয়ে এই সাম্মাম চাষ করা সম্পর্কে বলেন। আমি ইউটিউব থেকে এটি কীভাবে চাষ করে, সেটা জানলাম। পরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে বগুড়ার একটি খামার থেকে এ ফলের চারা সংগ্রহ করি। সেইসঙ্গে সেখানে গিয়ে চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাম্মাম ফল খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ। বহির্বিশ্বে এ ফলের বেশ প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে এর প্রচলন এখনো কম। এ ফলকে সৌদিতে সাম্মামসহ বিভিন্ন দেশে রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানী ডিউ নামে পরিচিত। দুই জাতের এ ফল রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো।’

দোআঁশ মাটিতে সাম্মাম চাষ করা ভালো। মাটি ভালোভাবে চাষ করে বেড এবং নালা করে, মালচিং দিয়ে এ ফলের চাষ করতে হয়। তাহলে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি খুবই অল্প সময়ের ফসল। গাছ লাগানোর দেড় মাসের মধ্যেই হয় সাম্মাম ফল।

খোকন বলেন, ‘আমি প্রথমে ভাইয়ের কথা মতো ঝুঁকি নিয়ে এ ফলের চাষ শুরু করেছি। এক বিঘা জমিতে আমার তিন হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ২-৩টি করে ফল রয়েছে। বেশি ফল রাখলে ফলন কম হয়। একেকটি ফলের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। প্রতিটি গাছেই ফল বেশ ভালো এসেছে। এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রথমবার হওয়ায় এক লাখ টাকার মতো। আগামীতে খরচ কম হবে। আশা করছি এবছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো লাভ হতে পারে।’

‘যেহেতু এই ফল কাঁচা-পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়, এজন্য কীটনাশকের পরিবর্তে আমি ফেরামন ফাঁদ, আগাছা যাতে না হয় এজন্য মালচিং দিয়েছি। সেইসঙ্গে বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করছি’, বলেন তিনি।

নতুন এই ফল এবং ফলের চাষাবাদ দেখতে অনেক দূরের এলাকা থেকেও লোজন খোকনের জমিতে আসছে, সেইসঙ্গে আগতদের এ ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন খোকন।

রবিউল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি এই গাছ লাগানো থেকে শুরু করে জমিতে দৈনিক হাজিরা হিসাবে কাজ করছি। জমিতে খুব ভালো ফল এসেছে। আর ফলগুলো খেতেও খুব ভালো। আগামীতে নিজের জমিতে আমি এ ফলের চাষ করবো বলে মনে করছি।’

এলাকার কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম এই ছেলে পাগলের মতো কী চাষ করছে। কিন্তু এখন তো দেখছি বেশ ভালো গাছ আর ফল ধরেছে। শুনেছি এটি বিদেশি ফল, খেতেও খুব ভালো। এর আগে এ ফল আমাদের এলাকায় হয়নি। ২০০ টাকা কেজি করে বিক্রি করছে কিছু কিছু। যদি লাভ হয়, তাহলে আগামীতে অনেকেই এই ফলের চাষ করবে।’

মস্তফা কামাল নামের একজন শিক্ষক বলেন, ‘সৌদি আরবের ফল এখানে চাষ হয়েছে বলে দেখতে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষ করেছে সেইসঙ্গে নতুন এ ফল দেখে দেখে মন ভরে গেছে।’  

বিদেশি এ ফল অধিক লাভজনক উল্লেখ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আধুনিক কৃষি গতানুগতিক কৃষিকাজের চেয়ে লাভজন। সাম্মাম বিদেশি ফল, তবে আমাদের এখানেও চাষ করা সম্ভব। নাইম নামের তরুণ কৃষককে আমরা চাষে পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছি। তিনি বিষমুক্ত আধুনিক উপায়ে চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন।’ আগামীতে এ ফলের চাষ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘রক মেলন বা সাম্মাম বেদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে এটির চাষ করা সম্ভব। মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া এলাকার একজন তরুণ এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে এ বছর এ ফলের চাষ করেছেন। তিনি খুব ভালো ফলও পাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফলমূল ও আধুনিক চাষাবাদে তরুণরা এগিয়ে আসছে। মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে শিক্ষিত তরুণ কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আধুনিক উপায়ে লাভজনক ফসল চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি।’

কুষ্টিয়া/মাহি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়